ভোটের আগের রাতেই গুলশানে কেন্দ্র দখলের লড়াই

ভোট শুরুর আগের রাতেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশানে একটি কেন্দ্র দখলে চেষ্টার অভিযোগ এসেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2015, 05:54 PM
Updated : 28 April 2015, 02:06 AM

সোমবার রাতে গুলশানের কালাচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী আফরোজ হাবিব ও তার ভাই সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কাউন্সিলর প্রার্থী আফরোজের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেফায়েত উল্লাহ গ্রেপ্তার হওয়ার সময় বলছিলেন, ভোট কারচুপির প্রতিবাদ করায় তাকে আটক করা হয়েছে। 

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাকির হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে পুলিশের সহায়তায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ আফরোজ সমর্থকদের।

রাতে আফরোজ সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুবকে হুমকি দেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাবুলের সমর্থকরা। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ঠেলাগাড়ী প্রতীকের বাবুলের সমর্থকদের অভিযোগ, ঘুড়ি প্রতীকের আফরোজ সমর্থকরাই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছিল।

তাদের এই বক্তব্য সমর্থন করছে পুলিশও।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আফরোজ সমর্থকরাই ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল।

সোমবার রাত ১০টার দিকে হ্যালোর এক শিশু সাংবাদিকের কাছে গোলযোগের খবর পেয়ে কালাচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক গেলে বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায়।  

আফরোজের বোন জুবাইদা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, এখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় জাল ভোট মারছে। এই ঘটনা জানার সাথে সাথে আমরা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।”

কালাচাঁদপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুবাইদা ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফরোজের বোন। তাদের ভাই রেফায়েত উল্লাহ যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রথম পরিচালক ছিলেন।

আফরোজের আরেক ভাই শাহিন ইকবাল বলেন, “চার তলা স্কুল ভবনের এক তলায় ছিল অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য। ভবনের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় বাবুলের সমর্থকরা সিল মারছিল। পুরো ভবনে লাইট জ্বলছিল। আমরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। আমার ভাই আফরোজ ও বড় ভাই রেফায়েত উল্লাহকে ভেতরে নিয়ে যায়।”

গোলযোগ শুনে আসা গুলশান থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশের কর্মকর্তারাও তখন ওই কেন্দ্রের ভেতরে ছিলেন।

কেন্দ্রের বাইরে পাহারায় থাকা মান্নাফ নামের এক পুলিশ সদস্যের কাছে ঘটনাটি জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভেতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন। উনারাই বলতে পারবেন।”

এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরাও সেখানে গেলে উপস্থিত মানুষদের হাততালি দিতে দেখা যায়।

জুবাইদার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন রেফায়েত উল্লাহ ভেতরে ছিলেন। তাকে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জুবাইদা।

দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে বাবুল সমর্থকদের জুবাইদার দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। তাদের মধ্য থেকে বলা হচ্ছিল- “আপনারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”

আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রেফায়েত উল্লাহকে

এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা রেফায়াত উল্লাহকে থানায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। পুলিশের গাড়ি থেকে তিনি বলছিলেন, “আমি প্রতিবাদ করেছি, আমাকে গ্রেপ্তার করেছে।”

এরপর গুলশান থানায় গেলে দেখা যায়, সেখানে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। থানার ফটকে কর্তব্যরত এসআই হাসান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিষেধ আছে। 

উপকমিশনার লুৎফুল কবীর টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা ও হাঙ্গামার অভিযোগে প্রার্থী আফরোজ ও তার ভাই রেফায়েত উল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

পুলিশের সহায়তায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ উড়িয়ে দেন তিনি।

জুবাইদা জানান, গ্রেপ্তার সবাই তাদের পক্ষের। এর মধ্যে তার আরেক ভাই মাহবুবুল আলমও রয়েছেন।

থানায় ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনিও।

থানায় ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে লুৎফুল কবির বলেন, “এমন কিছু তো জানা নেই।”