সিটি নির্বাচন: শেষ দিনের প্রচারে বিধি ভাঙার হিড়িক

তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা বলে এলেও তাদের পদক্ষেপে সবাই সন্তুষ্ট ছিল না।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 05:57 PM
Updated : 26 April 2015, 05:57 PM

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, আর বিভিন্ন জনকে সতর্ক করায় সীমাবদ্ধ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তৎপরতার মধ্যে প্রচারের শেষ দিকে এসে প্রার্থীদের প্রচারণায় বিধি মানার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি।

আগের দিন শনিবার গাড়িবহর নিয়ে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগসমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের মিছিলের পর রোববার ঢাকা উত্তরে ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী আনিসুল হকের প্রচারও ছিল একই রকম।

২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন মেয়রদের পাশাপাশি প্রচারে কাউন্সিলরও কোনো বিধি মানতে দেখা যায়নি।

সিটি নির্বাচনের আচরণবিধিতে মিছিল-শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট। গাড়িবহর নিয়ে প্রচারও নিষিদ্ধ। মাইক ব্যবহারেরও রয়েছে নিয়ন্ত্রণ। নিষিদ্ধ সড়ক আটকে প্রচারও।

কিন্তু এসব আচরণবিধি উপেক্ষা করেই প্রচারণায় মিছিল আর মোটর গাড়ি শোভাযাত্রা দেখা গেছে রোববার ঢাকার পথে। চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থীরা সংযত থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মিছিল দেখা গেছে।

এসব মিছিল-শোভাযাত্রায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হলেও নির্বাচন কমিশনের কোনো পদক্ষেপের কথা শোনা যায়নি।

বিকালে রাজধানীর মহাখালী ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় বিশাল এক নির্বাচনী মিছিল থেকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগসমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হকের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট চাওয়া হয়।

ওই মিছিলে উত্তরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ আসলামের মিষ্টি কুমড়া প্রতকের  পক্ষেও সমান প্রচার ছিল।

এই মিছিলের কারণে মহাখালী আমতলী থেকে গুলশানগামী রাস্তায় যানচলাচল বাধায় পড়ে।

এর আগে বেলা ১২টায় ১৫ থেকে ২০ টি গাড়ি নিয়ে মহাখালী থেকে শোভাযাত্রা বের করেন আনিসুল হক। তা মিরপুর, ভাসানটেক ও মাটিকাটা হয়ে উত্তরায় যায়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি এবং আনিসুল হকের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফারুক খানও ছিলেন এই শোভাযাত্রায়। সাবেক দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই গাড়িবহরের পাহারায় পুলিশের একটি মাইক্রোবাসও দেখা গেছে।

আগের দিন শতাধিক মোটর সাইকেল ও গাড়িবহর নিয়ে সাঈদ খোকনের মিছিলেরও সামনে-পেছনে পুলিশের গাড়ি ছিল।

দুপুর ১টায় মোহাম্মদপুরে অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল দেখা গেছে মেয়র প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিকে। মিছিলে কয়েকটি মাইক ছিল।

বিকালে মহাখালী থেকে গুলশান সড়কে চরমোনাই পীর সমর্থিত প্রার্থী ফজলে বারী মাসুদের পক্ষে ৫ থেকে ৬টি পিকআপ ভ্যান নিয়ে একটি মোটর শোভাযাত্রা দেখা গেছে।

এর বাইরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করেন। 

স্থানীয় এই নির্বাচনে এর আগে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা উত্তরে মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারেও বিএনপি ও খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেখা যায়, যা-ও নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘন।

গাড়িবহর নিয়ে দলসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোয় ইতোপূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সতর্ক করে চিঠিও দিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

প্রচারের শেষ দিন চট্টগ্রামে বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের প্রচারে হামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগ এসেছে ঢাকা উত্তরে সিপিবিসমর্থিত মেয়রপ্রার্থী কাফি রতনের প্রচারকর্মীদের উপরও। আগের রাতে হামলার শিকার হয়েছেন উত্তরের মেয়রপ্রার্থী মাহী বি চৌধুরীও।

আগামী মঙ্গলবার সকালে ভোট গ্রহণের আগে রোববার মধ্যরাতই ছিল প্রার্থীদের প্রচার চালানোর শেষ সময়। 

এরপর কোনো ধরনের প্রচার চালানো যাবে না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, বেআইনি প্রচার ঠেকাতে তারা নজরদারি চালাবেন।

“বিধি অনুযাযী রোববার মধ্য রাত থেকে প্রচারণা বন্ধ হবে। প্রচারণা বন্ধ মানে বন্ধ। যে কোনো প্রচার প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।”

বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের পাশাপাশি যে কোনো মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচারণা থেকেও বিরত থাকতে হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন ইসির সতর্কতায় অনেকে তাদের ব্যানার-পোস্টার নামিয়ে ফেলেন।  

বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন এভাবে, “আমাদের মোবাইল টিম রয়েছে লঙ্ঘনকারীদের ধরার জন্যে। এক দিকে দেয়ালের পোস্টার তুলে ফেলা হচ্ছে, উনি সরে যেতেই আরেকজন এসে পোস্টার লাগাচ্ছেন।”

এবার ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন মো. শাহ আলম, দক্ষিণে মিহির সারওয়ার মোর্শেদ ও চট্টগ্রামে আব্দুল বাতেন।

ঢাকা উত্তরে ১২ জন, দক্ষিণে ১৯ জন ও চট্টগ্রামে ১৪ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন।

ঢাকা উত্তরে ১০৯৩ প্রিজাইডিং, ৫৮৯২ সহকারী প্রিজাইডিং, ১১,৭৮৪ পোলিং কর্মকর্তা নিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছে ১৮,৭৬৯ জন।

ঢাকা দক্ষিণে ৮৮৯ প্রিজাইডিং, ৪৭৪৬ সহকারী প্রিজাইডিং, ৯৪৯২ পোলিং কর্মকর্তা নিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছে ১৫,১২৭ জন।

চট্টগ্রামে ৭১৯ প্রিজাইডিং, ৪৯০৬ সহকারী প্রিজাইডিং, ১৯৮১২ পোলিং কর্মকর্তা নিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছে ১৫,৪৩৭ জন।

আগামী ২৮ এপ্রিল তাদের পরিচালনায়ই তিন সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।