অভিযুক্ত আরজ মিয়া (জিয়া) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ সেমিস্টারের (২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে এই ঘটনার পর আরজের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক লুবনা জেবিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর নূর মোহাম্মদকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করায় তাৎক্ষণিকভাবে আরজ মিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।”
ঘটনা তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী নূরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর।
ওই শিক্ষক মামলার এজাহারে বলেছেন, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশ দিয়ে বিভাগে যাওয়ার সময় আরজ মিয়া তার পথরোধ করে। এর কারণ জানতে চাইলে আরজ তাকে ধাক্কা দেয়। একই সঙ্গে তার জামা ধরে টান দেয় এবং তাকে চড় দেয়। তখন ওই শিক্ষকও আরজকে চড় দেন। আরজ পাল্টা তার উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য করলে তিনি তাকে ধরে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
এদিকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মকর্তা রফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ছাত্রলীগ নেতা আরজ মিয়াকে আটক করে থানায় দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দলবল নিয়ে এসে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এদিকে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় আরজের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে একই দাবিতে তারা লোক প্রশাসন বিভাগের সামনে মানববন্ধন করে।
‘যৌন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়‘ ব্যানারে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষিকা লাঞ্ছিতকারী ছাত্রের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না।
তারা অভিযোগ করেছে, উপাচার্য ভবন ঘেরাওয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দলবল নিয়ে এসে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে সরে যেতে বলে। এক পর্যায়ে তাদেরকে ব্যানার কেড়ে নেয় তারা।
শিক্ষিকা লাঞ্ছনাকারী আরজকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা রয়েছে।
২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে পাঁচ লাখ টাকার টেন্ডার ছিনতাই করেছিলেন সিরাজ। তার সঙ্গে ছিল যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অশোক কুমার সাহা ১৫ মার্চ রাতে কোতোয়ালি থানায় শিক্ষককে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৯ এপ্রিল এক ছাত্রলীগকর্মীকে পুনঃভর্তির সুযোগ না দেওয়ায় তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর মুহাম্মদ ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আল-আমিনকে লাঞ্ছিত করে এবং পরিসংখ্যান বিভাগে ভাংচুর করেছিল ছাত্রলীগকর্মীরা।