ভূমিকম্প সচেতনতায় জোর প্রধানমন্ত্রীর

ভূমিকম্পের বিপর্যয় ঠেকাতে ঘরবাড়ি নির্মাণে নীতিমালা মানতে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের সচেতন হয়ে ওঠার ওপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 03:11 PM
Updated : 26 April 2015, 05:18 PM

রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের এই অঞ্চল কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। আমাদের পক্ষ থেকে যেটা যেটা করার আমি কিন্তু সেটা করেছি। অতীতে কোনো সরকার করেনি, যেটা আওয়ামী লীগ সরকার করেছে।”

জাকার্তা সম্মেলন থেকে ফিরে ওই সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও গড়ত দুদিনে নেপালে ভূমিকম্পে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব পড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই বিষয়টিও আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা কয়েকশ বছরের পুরনো শহর হওয়ায় এখন অনেক ভবনই নীতিমালা মেনে তৈরি হয়নি।

ভবন নির্মাণে নীতিমালা প্রয়োগ না হওয়ায় বিগত কয়েকটি সরকার এবং ভবন নির্মাতা ও মালিকদেরও দোষারোপ করেন তিনি।

“নীতিমালা অতীতে কেউ মানেনি, বা সরকারের পক্ষ থেকেও মানার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হয়নি। আমাদের দেশে যেটা হয়, মানুষ নিজেরা নিজেরা তৈরি করে ফেলে। যেমন তিনতলার ফাউন্ডেশন দিয়ে ১০ তলাও করে ফেলছে। কী পরিণতি হবে, সেটা কিন্তু চিন্তাও করে না।”

বাড়ির মালিক ও ভবন নির্মাতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা বসবাস করছে বা বাড়ি বানাচ্ছে তারা কি সমাজের শিক্ষিত লোক না? তারা কি বিল্ডিং কোড জানে না? তারা কি জানে না এভাবে বিল্ডিং তৈরি করলে কী হবে?”

ভবন নির্মাণের নীতিমালা কড়াকড়িভাবে মানার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এখন থেকে যেখানেই যত বিল্ডিং হচ্ছে, প্রত্যেকটা জায়গায় বিল্ডিং কোড মেনে যাতে হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি এবং প্রতিটি এলাকায় যাতে ভূমিকম্প সহনশীল বিল্ডিং হয় সেটা পালন করার জন্য আমরা প্রেসার দিচ্ছি।”

তবে সরকার বদলে গেল সেই কড়াকড়ি আর থাকে না বলে তা নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

“আমাদের তরফ থেকে তো সে প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। কিন্তু আমরা কতদিন ক্ষমতায় থাকব? আমাদের আগে তো অনেকেই ক্ষমতায় ছিল তারা কী করেছে?”

সরকারের ভূমিকম্প প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালে ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

তার সরকারের সময় দুর্যোগকালে বহুতল ভবনে যাওয়ার জন্য মই (ল্যাডার), ক্রেইন, এসকাভেটর, আগুন সহনীয় পোশাক, যানবাহন প্রভৃতিসহ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নেপালের ভূমিকম্পে দুই সহ্রসাধিক মানুষের প্রাণহানিতে শোক ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

একাসঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিচালনা এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার সামগ্রী, তাঁবু, শুকনো খাবার, পানি ও কম্বলসহ বিভিন্ন সামগ্রী নেপালে পাঠানোর কথাও তুলে ধরেন তিনি।

রানা প্লাজার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা হওয়া অর্থের ১২৭ কোটি এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়নি বলে টিআইবির বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে চেক এসেছিল, তাতে লেখা ছিল ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল’।

“তিন মাস খালেদা জিয়া জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তার জন্য তো কান্নাকাটি নেই। ... ১২৭ কোটিতে উনারা কত টাকা দিয়েছেন? উনাদের কেউ অসুস্থ হয়ে সহায়তা চাইলে তো এই তহবিল থেকেই দিতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের মধ্যে এইচটি ইমাম, গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, উপ প্রেস সচিব মামুন-অর-রশিদ।