চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীরা বলেন, ক্ষমতার এ বৈষম্যের কারণে ভোটারদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সিকিভাগও তাদের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
সিসিসিতে একাধিকবার নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলরদের দীর্ঘদিনের দাবি ক্ষমতা ও বরাদ্দ বৃদ্ধি; সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে প্রচারণায় সুযোগের বৈষম্যের অভিযোগ।
নগরীর সংরক্ষিত ৯ নম্বর আসনের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রেহেনা বেগম রানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারী কাউন্সিলরদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে আমরা হাইকোর্টে রিট করেছিলাম।
“২০০৪ সালে হাইকোর্ট সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য করা যাবে না বলে রায় দেয়। এরপরও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কোন মেয়রই এ রায় বাস্তবায়ন করেনি।”
এলাকার সড়কবাতি ও পরিচ্ছন্নতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নারীদের দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেন রেহেনা।
তিনি বলেন, “পুরুষ কাউন্সিলরদের চেয়েও অনেক বড় এলাকা নিয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করে এবং বেশি ভোট পেয়ে আমাদের নির্বাচিত হতে হয়। অথচ তিন ওয়ার্ড মিলে কার্যালয় ভাড়া পাই মাত্র চার হাজার টাকা।”
সিসিসির ৬০ বর্গমাইল আয়তনে সাধারণ ওয়ার্ড ৪১টি। এসব ওয়ার্ডে ২০১০ সালে নির্বাচিত সব কাউন্সিলরই পুরুষ। এবার তিনটি ওয়ার্ডে তিন নারী সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন।
নগরীর প্রতি তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠিত। এসব আসন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
অধিকার আদায়ে শুধু আদালতে যাওয়া নয় গত দুই মেয়াদে সিসিসির সাধারণ সভায়ও সরব ছিলেন নারী কাউন্সিলররা।
নগর জাতীয়বাদী মহিলা দরের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি, তিন বারের নির্বাচিত রেহানা কবির রানু ও সদ্য সাবেক ১১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি সিসিসির মাসিক সধারণ সভায় একাধিকবার এ নিয়ে পুরুষ কাউন্সিলরদের সাথে বিতণ্ডায় জড়ান।
জান্নাতুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারী কাউন্সিলরদের কাছ থেকে জন্ম সনদ ইস্যু করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। উপরন্তু পরিচ্ছন্নতার কাজে প্রতি ওয়ার্ডের জন্য তিনজন করে সেবক চাইলেও আমাদের কোনো সেবক দেওয়া হয়নি।
“এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের ও জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও আসলে নারীর জন্য কিছু করা সম্ভব নয়।”
নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের জন্য স্থানীয় সরকারের বিধিমালায় নারীর কাউন্সিলরদের যে কাজ নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাতে পরিবর্তন আনার তাগিদ দেন জান্নাতুল ফেরদৌস।
সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আনজুমান আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ টেন্ডার কমিটিগুলোতে কোনো নারী প্রতিনিধি রাখা হয় না। শুধু তাই নয় যান্ত্রিক ও নিরীক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও নারী কাউন্সিলর প্রতিনিধি থাকুক সেটা পুরুষ কাউন্সিলররা চায় না।
“বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় যেখানে পুরুষ কাউন্সিলরদের কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সেখানে নারী কাউন্সিলরদের তিন ওয়ার্ড মিলে দেওয়া হয় অর্ধেক।”
সমান অধিকারের দাবি নিয়ে পুরুষদের সাথে লড়াইয়ে নামা তিন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের একজন ২৩ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের ফাতেমা বাদশা বলেন, “দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। নারী কাউন্সিলররা কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না; তাদের মূল্যায়নও হয় না।”
এই কারণে সংরক্ষিত আসনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান তিনি।