ব্যাংক ডাকাতিতে দুই ‘জঙ্গি’ গ্রেপ্তার

আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকের কার্যালয়ে হানা দিয়ে সাতজনকে হত্যা ও টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2015, 06:09 AM
Updated : 24 April 2015, 08:42 AM

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গীর সাতনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার বাবুল সরদার (৩২) ও মিন্টু প্রধান (২৮) ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ‘প্রত্যক্ষভাবে’ জড়িত বলে দাবি করছে পুলিশ।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান বলেন, “গ্রেপ্তার দুজন এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবির করলেও বর্তমানে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

“তারা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ওই দিনের ঘটনা ঘটিয়েছে।”

আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কার্যালয়ে মঙ্গলবারের হামলা ও টাকা লুটের ঘটনায় এর আগে সাইফুল ইসলাম ও বোরহান উদ্দিন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওই দিন দুপুরে ব্যাংকটির কাঠগড়া বাজার শাখা কার্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও শক্তিশালী বোমা নিয়ে হানা দেয় ৮-১০ জন। তাদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন সাতজন। বোমার আঘাতে জখম হন কয়েকজন। 

ডাকাতির সময় এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া করে ধরে ফেলে দুই ডাকাতকে, এদের একজন গণপিটুনিতে মারা যান। লুট হওয়া সাত লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই উদ্ধার করে জনতা।

গণপিটুনির পর সাইফুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। এরপর সাইফুলের দেওয়া তথ্যে ওই রাতে বোরহান উদ্দিনকে আটক করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা এক মামলায় দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সাইফুল ও বোরহানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে সাতনগরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাবুল ও মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা নূরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “ওই দিন ডাকাতদের ধাওয়া করে যে দুজনকে ধরে পিটুনি দেয় জনতা তাদের ব্যবহৃত মটরসাইকেলের কাগজপত্র ওই বাড়িতে পাওয়া গেছে।”

এছাড়া তাদের কাছ থেকে গান পাউডার, গ্রেনেড ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, চারটি চাপাতি, আটটি ছোরা, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন, দুটি মটরসাইকেল এবং বেশ কিছু ‘উগ্রপন্থি’ বই ও লিফলেট উদ্ধার করার কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তাদের কাছে ‘জেএমবি ও শিবিরের বইপত্র’ পাওয়া গেছে বলে সকালে জানিয়েছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান।

রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতেই ওই দিন ব্যাংকে হামলা হয়েছিল দাবি করে ডিআইজি নূরুজ্জামান বলেন, “আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আগেই ধারণা করেছি, ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতরা সাধারণত মানুষ খুন করতে চায় না। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট।

“এ দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আমার ধারণাই সত্যি হয়েছে, তারা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ওই দিনের ঘটনা ঘটিয়েছে।”

গ্রেপ্তার দুজন নিজেদের একজনকে রিকশাচালক এবং অপরজন পোশাক কারখানার কর্মী বলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন।

বিভিন্ন পেশায় কাজ করা জঙ্গিদের এক ধরনের কৌশল বলে মন্তব্য করেন ডিআইজি নূরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আগে গ্রেপ্তার বোরহান এক সময় রাস্তায় পপকর্ন বিক্রি করত। এগুলো তাদের একটা কৌশল।”

কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের আশা প্রকাশ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।