গাজীপুরে পাগলা কুকুরের উপদ্রব, ভ্যাকসিনের সংকট   

গাজীপুরে পাগলা কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলেও সে তুলনায় প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না আক্রান্তরা।   

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2015, 06:02 AM
Updated : 24 April 2015, 06:02 AM

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, প্রায় বছর খানেক ধরে তারা কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখছেন।

“কিন্তু সরকারিভাবে প্রতিমাসে যে সংখ্যক ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয় তাতে মাসের অন্তত অর্ধেক সময় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।”

ভ্যাকসিনের অভাবে অনেককে পুরো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসেই তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেলে কুকুরের কামড় খেয়ে ৯৭৭ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। ওই মাসেই অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখা ছিল ১৯৫।

ওই মাসে ভ্যাকসিন আসে ৩০৫ অ্যাম্পুল। প্রতি রোগীর জন্য এক অ্যাম্পুল ভ্যাকসিন লাগে।

পরে ফেব্রুয়ারি মাসে কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে আসে ৬৬৪ জন এবং অন্যান্য প্রাণীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২২০ জন। সে মাসে ভ্যাকসিন আসে ২৭৬ অ্যাম্পুল।

মার্চে কুকুরে কামড়ের রোগীর সংখ্যা ছিল ৬২০ জন এবং অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। তখন ওই রোগীদের জন্য ভ্যাকসিন আসে ২২০ অ্যাম্পুল। সেগুলোর মধ্যে আবার দুটি নষ্ট হয়।

আক্রান্ত প্রতি রোগীকে চার দফায় মোট এক অ্যাম্পুল দিলে ডোজ পূরণ হয় বলে জানান ডা. আব্দুস সালাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা থেকে প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হলেও তার সংখ্যা থাকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বারবার সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি।

“এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এলাকায় কুকুরের কামড়ের রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা কিংবা কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণ ও কুকুরকে জলাতঙ্কের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং হাসপাতালে মানুষের প্রয়োগের জন্য ভ্যাকসিনের সরবরাহ বাড়াতে হবে।”  

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, “কুকুর নিধনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ওই নিষেধাজ্ঞায় পাগলা কুকুর না কি পোষা কুকুর নিধন করা যাবে না তা নির্দিষ্ট করা না থাকায় আমরা সমস্যার মধ্যে পড়েছি।

“এ অবস্থায় কুকুর মারতে গেলে আদালত অবমাননার শামিল হবে। তবে তারপরও পাগলা কুকুর বা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর  কুকুর বাছাই করে করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

এক্ষেত্রেও লোকবল সংকটে ভুগছেন বলে জানান তিনি।

তবে সমস্যা সমাধানে এভাবে কুকুর নিধন না করে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন গাজীপুরের ভেটেরিনারি অফিসার মো. সোহরাব হোসেন।

গাজীপুরে প্রায় ২০/২৫ হাজারের মতো কুকুর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব কুকুর নিধন করে সংখ্যা কমানো সম্ভব নয়। এজন্য কুকুরের দেহে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দিতে হবে।”

এছাড়া কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া বাড়ানো যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

কুকুরের উপদ্রবা কমাতে পরিকল্পিতস বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বেওয়ারিশ কুকুর আটকে রাখতে সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।