রাবি উপাচার্য ‘লাঞ্ছনা’: রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপাচার্য ‘লাঞ্ছিত’ হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে আচার্য ও রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ প্রধানদের সংগঠন চেয়ারম্যান কাউন্সিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 01:54 PM
Updated : 21 April 2015, 01:54 PM

মঙ্গলবার চেয়ারম্যান কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।

গত ১৫ ও ১৬ এপ্রিল সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার হাতে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও শিক্ষকদের প্রতিবাসহ বিভিন্ন সংগঠনের অব্যাহত কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। 

চেয়ারম্যান কাউন্সিলের চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ ও ১৬ এপ্রিল উপাচার্যের দপ্তরে সংঘটিত ঘটনাটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিবেচনা করে চেয়ারম্যান কাউন্সিল এ বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে, এটি শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেতই নয় স্বাধীন জ্ঞানানুশীলন, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও উপাচার্যসহ শিক্ষক সমাজের সম্মানের প্রতি অকল্পনীয় অবজ্ঞা প্রদর্শন ও কালিমা লেপনের শামিল।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২টি বিভাগের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে গঠিত চেয়ারম্যান কাউন্সিল রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের কাছে ঘটনায় জড়িতদের অশুভ কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখা এবং বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করে।

গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাজশাহীর গোদাগাড়ী-তানোর আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

তবে, ওমর ফারুক চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এছাড়া, পরদিন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।

এ ডাবলু সরকার ‘কিছুটা উত্তেজনা’র সৃষ্টি হয় বলে স্বীকার করলেও দুর্ব্যবহারের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

১৫ এপ্রিলের ঘটনা

রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের সভাপতি হলেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক।

সম্প্রতি কলেজে একাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ম ভঙ্গ করে ভর্তি করানো হয় বলে ওই কলেজকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয়।

এর জেরেই উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে সাংসদ দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ব্যাপারে উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংসদ কয়েকজন লোক নিয়ে আমার অফিসে খুবই খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে আমি মনে করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে অপমান করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কলেজের জরিমানা মওকুফ করার আবেদন জানাতে তার কাছে গিয়েছিলাম।

“কিন্তু তিনি কেনো আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন তা আমার জানা নেই।”

১৬ এপ্রিলের ঘটনা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মুমিন, সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকারসহ ১৫-১৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন।

ওই সময় উপাচার্যের দপ্তরে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার সাহাসহ কয়েকজন শিক্ষক।

ওই সময় ডাবলু সরকার উপাচার্যকে তাদের দলের নেতাকর্মীদে কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

এর জবাবে নিয়ম মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান উপাচার্য।

এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে নেতারা গালাগাল দেন।

এ ব্যাপারে ডাবলু সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবিরের হাতে নিহত ছাত্রলীগকর্মী ফারুকের বোনের চাকরি স্থায়ী করা, আহত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করাসহ কিছু দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান।

এ সময় নেতারা উঠে আসতে গেলে তাদের সহ-সভাপতিকে এক শিক্ষক হাত ধরে টান দেন। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হলে ‘কিছুটা উত্তেজনা’ হয় বলে জানান ডাবলু।

বৃহস্পতিবারের এ ঘটনার পরপরই উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাবি ছাত্রলীগের একাংশ।

সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান উপাচার্য জামায়াত-শিবির তোষণ করেন বলে অভিযোগ করেন।

অপরদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সোহরাব হোসেন নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপমানজনক।

এরপর গত কয়েকদিন ধরে রাবি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে।