আশুলিয়ায় ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা, নিহত ৮

ঢাকার আশুলিয়ায় বেসরকারি একটি ব্যাংকে ডাকাতের গুলিতে সাতজন নিহত হয়েছেন। এরপর জনতা এক ডাকাতকে ধরে পিটিয়ে মারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 10:50 AM
Updated : 22 April 2015, 11:50 AM

পোশাক শিল্প পল্লী এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ডাকাতরা হানা দেয় বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে।

তখন স্থানীয়রা প্রতিরোধে এগিয়ে এলে ডাকাত দল গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এতে ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপকসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জনতার ধাওয়ার মুখে সন্দেহভাজন ডাকাতদের দুজন মোটর সাইকেল থেকে পড়ে গেলে তারা গণপিটুনির শিকার হন। এতে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান বলে ঢাকার এএসপি (সাভার সার্কেল) রাসেল শেখ জানিয়েছেন।

ডাকাতরা সাত লাখ টাকা লুট করেছিল বলে বাণিজ্যিক ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক মোহাম্মদ সোহেল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে এর প্রায় ছয় লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে।

ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের বলেন, “লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার হয়েছে। ডাকাতদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।”

ঘটনার পরপরই র‌্যাব ও পুলিশ ব্যাংকটির আশপাশের এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়। বিশমাইল-জিরাব-সিঅ্যান্ডবি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশিও চলে।

গত ২১ এপ্রিল ঢাকার আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ডাকাতির ঘটনায় আটজন নিহত হন।

ব্যাংকের আশপাশ থেকে পাঁচটি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া ব্যাংক থেকে পশ্চিম দিকে জিরাব-বিশমাইল সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া অনেকগুলো বোমা পাওয়া যায়।

পরে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট বোমাগুলো পর্যায়ক্রমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে। ওই সময় বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিল।

ডাকাতের গুলিতে নিহতরা হলেন- ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. অলিউল্লাহ (৪৫), ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী বদরুল আলম (৩৮), ব্যাংকের গ্রাহক ব্যবসায়ী পলাশ (৪৮), ব্যাংক ভবনের নিচে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মুনির হোসেন (৬০), ব্যাংক ভবনে অবস্থিত মার্কেটের দোকানি জিল্লুর রহমান, আশুলিয়ার কুটুরি এলাকার জমির (৩৮) এবং ব্যাংকের পাশের দোকানের চাল বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ (৩৫)।

গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহতরা হলেন- পারভেজ, নুর ইসলাম, আয়ুব আলী, শফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদ আলী, সাইফুল ইসলাম, রমজান, সাহজাহান, আনিছ, আয়ুব আলী, সাইফুল ইসলাম, হামেদ আলী, সাহাজাদ, রফিক, আব্দুল হক ও সালাম।

আহতদের সবাই সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গণপিটুনিতে নিহত সন্দেহভাজন ডাকাতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার আহত সঙ্গীর পরিচয়ও মেলেনি।

গ্রাহক বেশে ঢুকেছিল ডাকাতরা

ডাকাতরা গ্রাহকের বেশে ঢুকে ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহকে বোমা ও অস্ত্র দেখিয়ে ভল্টের চাবি চেয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যাংককর্মীরা জানিয়েছে।

রবিন দেওয়ান নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোটর সাইকেল ও প্রাইভেটকারে আসা ৮/১০ জন ডাকাত ব্যাংকে ঢোকে। তারা প্রথমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে।

ব্যাংকের ক্যাশ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, “ডাকাতরা ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহকে গ্রেনেড ও অস্ত্র দেখিয়ে ভল্টের চাবি দিতে বলে। তিনি চাবি দিতে না চাইলে ডাকাতরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে ক্যাশের টাকা ছিনিয়ে নেয়।”

ওই সময় গুলি ছোড়ার পাশাপাশি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতরা। তাদের বেপরোয়া গুলি, বোমা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ব্যাংকের ভেতরেই মারা যান ওয়ালিউল্লাহ, পলাশ ও বদরুল।

মোস্তাফিজুর রহমান বরকত নামে প্রত্যক্ষদর্শী আরেকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে শুনে এসে দেখি, ব্যাংকের ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। গুলিবিদ্ধ ও ধারাল অস্ত্রের জখম নিয়ে আরও ১০-১৫ জন কাতরাচ্ছে।”

এদিকে ব্যাংকে ডাকাত ঢোকার খবর পেয়ে পাশের মসজিদের মাইকে তা প্রচার করে এলাকাবাসীকে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

তখন পাশের বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা ও এলাকাবাসী এসে ডাকাতদের ঘিরে ফেলে। তখন ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে ব্যাংকের নিচে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মনির এবং ক্রোকারিজ দোকানি জিল্লুর মারা যান বলে রবিন জানান।

ওই সময় গুলিবিদ্ধ কুটুরিয়া এলাকার জমির ও চাল ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ রাতে এনাম মেডিকেলে মারা যান বলে আশুলিয়া থানার এসআই জাকারিয়া হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

এলাকাবাসী জানায়, ক্ষুব্ধ জনতা গুলি উপেক্ষা করে ডাকাতদের ধাওয়া দিলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিশমাইল-জিরাব সড়কের আমতলা এলাকার আজমত গ্রুপের সামনে মোটর সাইকেল থেকে পড়ে যান দুজন।

তখন গণপিটুনিতে সন্দেহভাজন এক ডাকাত ঘটনাস্থলেই মারা যান বলে এএসপি রাসেল শেখ জানান। অন্যজনকে পুলিশে তুলে দেয় জনতা। জ্বালিয়ে দেয় মোটর সাইকেলটি।

আমতলায় ৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টাকাভর্তি একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ডাকাতির পর ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল এবং এনাম মেডিকেলে যান। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক মোহাম্মদ সোহেল।