সিটি ভোটেও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 10:43 AM
Updated : 21 April 2015, 03:16 PM

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ মঙ্গলবার কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “জনমনে যেন কোনো ভীতি না থাকে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে, সুন্দরভাবে, নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে সে জন্য আমরা সেনাবাহিনীকেও এ নির্বাচনে ব্যবহার করব।”

আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ‘সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই’ বলে এলেও বিএনপি ও সমমনারা শুরু থেকেই ভোটের নিরাপত্তায় সেনা চেয়ে আসছিল।

তবে ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট সামনে রেখে সোমবারও এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিল নির্বাচন কমিশন।

কয়েক দফা বৈঠকের পর কমিশনারদের ‘মতানৈক্য কাটিয়ে’ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সামনে আসেন শাহনেওয়াজ।

তিনি বলেন, “তিন সিটি করপোরেশনেই আমরা সেনাবাহিনী রাখার বিষয়ে একমত হয়েছি। ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সেনাবাহিনীকেও ভোটে ব্যবহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”

শাহনেওয়াজ জানান, ভোটের দুদিন আগে, ভোটের দিন ও পরের দিন সেনা সদস্যরা মাঠে থাকবেন।

এছাড়া ভোটের আগে-পরে চারদিন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

সেনা মোতায়েন নিয়ে কমিশনারদের মতভিন্নতা কেটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অলরেডি দু’বার মিটিং করেছি। যা জানার, যে কমিউনিকেশন দরকার তা হয়ে গেছে। সামনে কোনো প্রয়োজন না পড়লে বসার কোনো পরিকল্পনা নেই।”

এর আগে কখনও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেনি নির্বাচন কমিশন। চার বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন।

তখন ইসির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেনা মোতায়েন সম্ভব হয়নি।

এবার নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়া সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফিরবেন ভোটের পাঁচদিন আগে ২৩ এপ্রিল।

‘রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স’

কমিশনার শাহনেওয়াজ জানান, গত রোববারের বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, ভোটের আগে সার্বিক পরিবেশ ‘অত্যন্ত ভালো’। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ‘কোনো সমস্যা নেই’।

তারপরও ‘সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন করতে এবং ‘জনমনের ভীতি কাটাতে’ কমিশন ভোটে সেনাবাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। 

“এখন তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেব। আমরা সেনাবাহিনীকে রিজার্ভ ফোর্স এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করব।”

সেনাসদস্যরা ভোটকেন্দ্রে থাকবেন কিনা জানতে চাইলে এ কমিশনার বলেন, “কোনো নির্বাচনেই সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ডিউটি দেওয়া হয়নি, এবারও হবে না।

“তারা রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। রিটার্নিং অফিসার যখন চাইবেন তখনই তারা সাড়া দিয়ে চলে আসবে। যখন যা দরকার, তখন তাই করবে।”

‘স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জন্য’ যতটুকু দরকার ‘ততটুকু’ সেনাবাহিনী করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

শাহনেওয়াজ জানান, ভোটের দায়িত্বে কী পরিমাণ সেনা থাকবে তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

“সংখ্যা কোনো সমস্যা নয়। আমরা আরও আলোচনা করে কতটুকু দরকার তা বলব। যখন যেটুকু দরকার আমরা সেভাবে নিতে পারব।”

তিনি জানান, ভোটের দায়িত্বে সেনাসদস্যদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হবে, প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

‘পরিস্থিতি এবার ভিন্ন’

এটিএম শামসুল হুদার ইসি নারায়ণগঞ্জে সেনা চেয়ে না পেলেও বর্তমান কমিশনের ক্ষেত্রে ‘তেমন কিছু ঘটবে না’ বলে মনে করেন কমিশনার শাহনেওয়াজ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি আজকের কথাই বলছি, এখনকার পরিবেশের কথাই বলছি। পূর্বে কী ছিল তা নিয়ে এখন আলোচনার প্রয়োজন বোধ করিনা।”

তিনি বলেন, “আমরা যে ব্যবস্থা নিচ্ছি তা এখন গণমাধ্যমকে জানালাম।”

ইসি সেনা মোতায়েনে সরকারকে অনুরোধ করবে, নাকি সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দেবে জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ বলেন, “নেক্সট কোশ্চেন, প্লিজ।”

‘সবার জন্য সমান সুযোগ থাকায়’ এবার ভোটও ‘সুন্দর হবে’ বলে আশা করছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, “ভোটের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে যা করা দরকার, সবটাই করেছি। সবাই সেটাকে মেনে নিয়ে নির্বাচনে এসেছে। ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারবে।”

যেভাবে সেনা চাইবে ইসি

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রথা অনুযায়ী এখন সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে চিঠি দেবে ইসি সচিবালয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ ও ১৩১ ধারা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘ইন্সট্রাকশনস রিগার্ডিং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর সপ্তম ও দশম অনুচ্ছেদের ক্ষমতা ও নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত হবে।

মোতায়েন করা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের কাজ হবে নির্বাচনী কাজে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করা।