জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র: কারাগারে বিএনপি নেতার ছেলে

সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার দায়ে প্রবাসী এক বিএনপিনেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে (৩৬) কারাগারে ঢুকতে হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 05:29 AM
Updated : 21 April 2015, 08:06 AM

নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালত গত ৪ মার্চ এ মামলার রায়ে সিজারকে সাড়ে তিন বছর কারাদণ্ড দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২০ এপ্রিল সোমবার সিজার রিপোর্ট করার পর স্থানীয় সময় বেলা ২টার দিকে তাকে কানেটিকাটের কারাগারে পাঠানো হয়।

দণ্ডভোগের পর আরো দুই বছর সিজারকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে।

ওই ঘটনায় ৩০ মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত সিজারের সহযোগী মার্কিন নাগরিক জোহানেস থালেরকেও একইদিন কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি প্রিত ভ্যারারার মুখপাত্র জেনিফার কুয়েলিজ জানিয়েছেন।

ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা মামলার আরেক আসামি এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৩০ এপ্রিল।

দণ্ডিত রিজভী আহমেদ ওরফে সিজার (৩৬) বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করছেন মামুন।

২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট গ্রেপ্তার হন থালের ও সিজার। গত ১৭ অক্টোবর আদালতে দোষ স্বীকার করেন তারা।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত এফবিআই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে ঘুষ সাধার কথা স্বীকার করেন দুজনই। লাস্টিক ওই সময় এফবিআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে কাজ করতেন। থালের হলেন লাস্টিকের ছোটবেলার বন্ধু। আর একটি দোকানে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে রিজভীর সঙ্গে তার পরিচয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গোপন তথ্য পেতে এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার কথা সিজার আদালতে স্বীকার করেছেন বলে আদালতের নথিতে বলা হয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ জয়

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত এফবিআই সদস্য লাস্টিকের সঙ্গে সিজারের ঘুষ লেনদেন হয় বলে এতে বলা হয়েছে। লাস্টিক ওই সময় এফবিআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।  

সিজার দুটি উদ্দেশ্যে জয় সম্পর্কিত তথ্য পেতে তৎপরতা চালান জানিয়ে আদালতের নথিতে বলা হয়,“প্রথমত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঠিকানা বের ও তার ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তিনি। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ভার্জিনিয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে অপহরণ ও শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তিনি।

“দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এমন তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচার করতে চেয়েছিলেন।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং নিজের দল বিএনপির প্রতিপক্ষের একজন হওয়ায় জয়কে তিনি টার্গেট করেছিলেন বলে এতে বলা হয়।

নথিতে বলা হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ না পাওয়ায় লাস্টিক ও থালের ২০১২ সালের মার্চের দিকে সিজারকে তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে জয় সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে অন্য একজন প্রাইভেট গোয়েন্দার সঙ্গে রফা করেন সিজার।

“তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সিজার বলেছেন, তিনি ওই প্রাইভেট গোয়েন্দাকে চার হাজার ডলার দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে ‘ভয় দেখানো’,‘অপহরণ’ ও ‘ক্ষতি’ করার পরিকল্পনায় সহযোগিতার জন্য তাকে অনুরোধ করেছেন।”

এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দিয়ে জয় সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশি এক সাংবাদিক, এক রাজনৈতিক মিত্র ও একজন প্রাইভেট গোয়েন্দাকে দিয়ে বিনিময়ে সিজার প্রায় ৩০ হাজার ডলার নিয়েছিলেন বলেও এতে বলা হয়েছে।

সিজারের এই ষড়যন্ত্রে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আরো তিন নেতা জড়িত বলে মামলায় বলা হয়।

ফেডারেল ক্রিমিনাল হিসেবে কারাগারে ঢোকার আগের ‍দিন শনিবার ডানবুরিতে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সিজার বলেন, সাজা পাওয়ায় তার কোনো অনুশোচনা নেই।

“আমি বিএনপির স্বার্থে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করব।”