শাবির উপাচার্য হোক এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: জাফর ইকবাল

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ শিক্ষকের প্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়ার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

জাবেদ ইকবাল, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2015, 04:03 PM
Updated : 20 April 2015, 04:03 PM

বর্তমান উপচার্য আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগ দাবিতে সোমবার এ শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া শেষে জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পরিপক্ব ও আধুনিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এটা সবাইকে বুঝতে হবে, সরকারকে বুঝতে হবে।

“কাজেই সরকার ঢাকা থেকে একজন উপাচার্যকে পাঠাবেন, যার মেধা আমাদের থেকে বেশি, উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা যার আমাদের থেকে বেশি- এটা আমি কিন্তু সেটা বিশ্বাস করি না।”

এখানকার শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর ক্ষমতা রাখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে একটাই দাবি আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন না। আমাদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর দায়িত্বটা দেন। আপনারা দেখবেন এই বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ভালো চলছে, বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো চলবে।”

একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাফর ইকবাল বলেন, “উনাকে (উপাচার্য) দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। বর্তমান উপাচার্যের নিয়োগের ৬ মাস পর থেকে আমি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।

“আমি যে সিদ্ধান্তটা দেড় বছর আগে নিয়েছি আমার কলিগরা তা আজকে নিয়েছেন। তারা অনেক সহ্য করেছেন,” বলেন তিনি। 

নতুন কর্মসূচি দেবেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগ দাবিতে মঙ্গলবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’।

গত সাত বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা পরিষদটির যুগ্ন আহ্বায়ক অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে এরই মধ্যে শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

শিক্ষকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে আর এই উপাচার্যের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই মঙ্গলবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চললেও সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হবে। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না বলে জানান অধ্যাপক মস্তাবুর রহমান।   

পদত্যাগ করবেন না উপাচার্য

সরকার সমর্থক শিক্ষকদের আন্দোলনে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তচিন্তার জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে কাউকে জোর করে কাজ করানোর সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের বিষয়টিকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে হয়েছে বলে তিনি বলেন, “আশা করি, পদত্যাগকারী শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করবেন।”

শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। একজন শিক্ষক হয়ে শিক্ষকদের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল আচরণের প্রশ্নই আসে না।”

হঠাৎ পদত্যাগ বোধগম্য নয় আওয়ামী-বামদের একাংশের

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে একসঙ্গে ৩৫ জনের পদত্যাগের বিষয়টি বোধগম্য নয় আওয়ামী ও বাম সমর্থিত শিক্ষকদের একাংশ ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’র, যারা মহাজোট সরকারের শুরু থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বের বাহিরে আছেন।

ওই পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম জানান, গত ৭ বছর ধরে যে উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন, তাদের সঙ্গেই এই শিক্ষকরা কাজ করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ নানা পদেই রয়েছেন।

“আজ এমন কী হলো যে তারা গণ পদত্যাগ করতে যাবেন, বিষয়টি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।”

নিজেদের প্যানেল কোনো পদের জন্য কাজ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে গেলে স্থিতিশীলতার স্বার্থে তারা যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

পর্যবেক্ষণে বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক  সাজেদুল করিম।

তাদের পদত্যাগের পেছনে নিশ্চয়ই ‘কোনো কারণ’ রয়েছে। তবে তাদের গণপদত্যাগের বিষয়টি কাঙ্খিত নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।