পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. খালেদ হোসেন ওরফে মেজর খালেদ ওরফে এসআই মাহিদ (৩০), সিএনজি অটোরিকশা চালক আলী হোসেন (৩৫) ও জামাল হোসেন (৪০)।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, দুটি খেলনা পিস্তল, গোয়েন্দা পুলিশের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পোশাক, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার সহকারী কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ১ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃতরা সহেযোগীদের নিয়ে সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ রোডে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ছিনতাই করে।
“তারা ওই ব্যক্তিকে একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় এবং তার কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ সাত লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে একটি স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়।”
এ ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আনিছ ও আব্দুল হক নামে দুইজনকে আগে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত হুন্ডি ও অবৈধভাবে টাকা আনা নেয়াকারীদের টার্গেট করে। পরে পুলিশ পরিচয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে এক জায়গায় নিয়ে ছেড়ে দেয়। যেন টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার পরও তারা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে না পারে।
অভিযানের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, পুলিশ প্রথমে মাইক্রেবাসের মালিকানা বের করে। এরপর মাইক্রোবাস চালক আব্দুল হক ও ছিনতাইকারী দলের সদস্য আনিছকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অভিয়ান চালিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তার করে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার খালেদ ছিনতাইকারী দলটির মূল হোতা। সে ঢাকায় থাকলেও নগরীতে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করে আবার চলে যেত।
“গ্রেপ্তারকৃতরা তিনভাগে ভাগ হয়ে ছিনতাই করত। এদের কয়েকজন টাকা বহনকারীদের অনুসরণ করত। একটি দল মাইক্রোবাস নিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করত।”
রউফ আরও জানান, গ্রেপ্তার আনিছ অনুসরণকারী দলের সদস্য। কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করার পর তারা বিষয়টি খালেদকে জানাত এবং সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসত।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, খালেদ চট্টগ্রাম এসে আলীকে খবর দিত এবং আলী ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করার জন্য মাইক্রোবাস ঠিক করত।
আনিছসহ কয়েকজন টার্গেট করা ব্যক্তিটিকে অনুসরণ করার পাশাপাশি পুলিশের উপস্থিতি নেয় এধরনের স্থান নির্ধারণ করত এবং ওই স্থানে মাইক্রোবাসটি দাঁড়ানো থাকত।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও জানান, খালেদ ও তার দুই সহযোগী আলী হোসেনের অটো রিকশা করে গিয়ে মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকা স্থানে যেত। পরে মাইক্রোবাসে উঠে পুলিশের পোশাক গায়ে দিত এবং অনুসরণকারীদের টার্গেট করা ব্যক্তিকে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলত।
পরে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে ফেলে রেখে ফেলে দিত, বলে জানান রউফ।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ আরও বলেন, খালেদ এবং তার সহযোগীরা কাজ শেষে আবার সেখান থেকে অটো রিকশা করে চলে আসত। যাতে তাদের কেউ সন্দেহ করতে না পারে।
তিনি আরও জানান, তাদের ব্যবহৃত পোষাকগুলো আলী হোসেনের হেফাজতে থাকত। তারা ছিনতাইয়ে যাওয়ার সময় আলী হোসেনের অটো রিকশা ব্যবহার করলেও প্রতিটি ছিনতাইয়ের সময় মাইক্রোবাস পরিবর্তন করত।
এজন্য তাদের নির্দিষ্ট কিছু মাইক্রোবাস আছে বলেও জানান তিনি।
রউফ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানায় ২০০৬ সাল থেকে তারা এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত হয়। এই নয় বছরে তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ১০০টির বেশি ছিনতাই করেছে।
খালেদ এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদের বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ ও পাহাড়তলী থানায় দুটি করে এবং সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা আছে।
জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ আরও জানায়, এভাবে করে সে নিজের নামে ২০ লাখ টাকার এফডিআর এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছে।
রউফ জানান, পুলিশের ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো কিছু বাজার থেকে কিনেছে তাছাড়া পোশাকগুলো তাদের এক সহযোগী তৈরি করেছে।
এই সহযোগীদেরও পুলিশ খুঁজছে বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আনিছ ও আব্দুল হকের স্বীকারোক্তি মতে নগরীর সরাইপাড়া এলাকা থেকে জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে শনিবার আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রাতে সরাইপাড়া এলাকায় তাদের বাসা থেকে পুলিশের ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো উদ্ধার করা হয়।
রোববার ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ দর্জিপাড়া এলাকা থেকে ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলিসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার ভোরে গ্রেপ্তার দিদারুল আলম (৩০) শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে দাবি পুলিশের।
লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজাহান কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিদারুলের কাছ থেকে একটি এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ ও দেড়শটি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
“দিদারুল এ এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর আগে যত ইয়াবা বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই বলেছেন দিদারুলের কাছ থেকেই তারা ইয়াবা নিতেন।“
ওসি শাহজাহান কবির জানান রাত থেকে ওঁত পেতে থাকার পর ভোরে বাড়ি এলে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিদারুলের বিরুদ্ধে মাদক আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা আছে লোহাগাড়া থানায়।