সকল নারীর কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী: মিজানুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ষবরণের উৎসবের মধ্যে নারীর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সকল নারীর কাছে’ ক্ষমা চাইলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2015, 07:46 AM
Updated : 20 April 2015, 02:57 PM

সোমবার মগবাজারে কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিস্মিত, মর্মাহত ও লজ্জিত।”

১৪ এপ্রিলের ওই ঘটনার পর পুলিশের ‘লোক দেখানো’ ভূমিকা নিয়েও হতাশাও প্রকাশ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “সকল নারীর কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহীনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে।”

বর্ষবরণের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।

ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ থাকলেও নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অবহেলার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও।

সে সময় চার নিপীড়ককে ধরে পুলিশের কাছে দেওয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।

পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকার সিসি ক্যামেরার ধারণ করা ছবি বিশ্লেষণ করলে একদল ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়, যারা একাধিক ঘটনায় নারীদের ওপর যৌন আক্রমণ চালিয়েছেন। চাপ দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিসহ তার মতো বেশধারী কয়েকজন ছিলেন ওই আক্রমণের কেন্দ্রে।

তবে ওই ব্যক্তিদের কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মিজানুর রহমান বলেন, “সেইদিনের ঘটনায় পুলিশ গতানুগতিক ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন ছাত্র সন্দেহভাজন দুজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। বলা হচ্ছে, পুলিশের অবহেলায় তারা পালিয়ে গেছে। পুলিশের এই ধরনের ভূমিকা হতাশাজনক। এটি কর্তব্যে অবহেলার শামিল।”

তিনি জানান, সিসি ক্যামেরা দেখে দোষীদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও পুলিশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে বলে কমিশনে অভিযোগ এসেছে।

“পরবর্তীতে ঘটনাটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের কিছু তৎপরতা দেখা গেছে, যা নিছক লোক দেখানো। কমিশন স্পষ্ট করে বলতে চায়, অপরাধী যেই হোক না কেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কালক্ষেপেণ বা দীর্ঘসূত্রতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।”

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের মাঠে থাকা প্রার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ কিংবা দুঃখপ্রকাশ না করায় তাদের সমালোচনা করেন মিজানুর রহমান।

“যারা আগামী দিনের নগরপিতা হবেন, এই বিষয়ে তাদের নীরবতা আমাদের বিচলিত করছে। আমরা আগামী দিনের জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধে সুষ্পষ্ট অঙ্গীকার চাই।” 

পহেলা বৈশাখের ঘটনা তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি কমিটি গঠন করারও আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

অন্যদের মধ্যে কমিশনের সদস্য মাহফুজা খানম, এ্যারোমা দত্ত সংসাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।