সেলফি আর প্রশ্নবাণে দুই মন্ত্রীর এক বিকেল 

একজনের বয়স সত্তর, অন্যজন তার অর্ধেক। প্রথমজন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অভিভাবক, অন্যজন সামলাচ্ছেন তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

শহীদুল ইসলাম ও কাজী শাহরীন হক তিন্নিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 06:30 PM
Updated : 19 April 2015, 06:36 PM

তবে শ’ খানেক শিশু সাংবাদিকের সঙ্গে আড্ডা আর সেলফি তোলার হুল্লোড়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ ও জুনাইদ আহমেদ পলকের বয়স কোনো বাধা হল না।     

ভোটের মৌসুম ছাড়া ‘প্রোটকলের বেড়া ডিঙিয়ে’ দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের সঙ্গ পাওয়ার সুযোগ এ দেশের সাধারণ মানুষের খুব একটা হয় না। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিকরা সেই দুর্লভ সুযোগ পেয়ে গেল তাদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত ‘আমার কথা আমাদের কথা’বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে এসে।

অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত ছিল রোববার বিকাল ৪টায়। হ্যালোর শিশু সাংবাদিকরা রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে জড়ো হতে থাকেন ৩টা থেকেই। 

ঠিক সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার ১০ মিনিটের মাথায় পৌঁছে যান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী পলকও।  

অনুষ্ঠান শুরুর আগে এই বাড়তি সময়ে ভয় আর দ্বিধা কাটিয়ে শিশু সাংবাদিকদের একজন মন্ত্রীর কাছে আব্দার তুলে ধরে- “স্যার আপনার সাথে ছবি তুলব।”

মুখে কিছু না বলে উঠে দাঁড়ান মন্ত্রী। আশেপাশে থাকা ক্ষুদে সাংবাদিকদের কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেন নিজের পাশে। আরেক শিশু সাংবাদিক ঝটপট ক্লিক করে যায় ক্যামেরায়।

সাহস পেয়ে এবার আরেকজনের বায়না, “স্যার, সেলফি তুলব।”

মন্ত্রীও তাকে সহাস্যে কাছে ডাকেন- “হ্যাঁ, আস আস; অবশ্যই।”

এরইমধ্যে প্রতিমন্ত্রী পলককেও শিশু সাংবাদিকদের ঘেরাওয়ের মধ্যে সেলফির জন্য দাঁড়াতে দেখা যায়।

 

কেবল সেলফি তুলে নয়, দুই মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে আর নানা বিষয়ে কথা বলে অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় পার করেছে আগামী দিনের এই ‘কাণ্ডারিরা’।  

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী এই শিশু সাংবাদিকদের ১০১টি লেখা ও প্রতিবেদন নিয়েই ‘আমার কথা আমাদের কথা’প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিভিন্ন টেবিলে ঘুরে ঘুরে শিশুদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ। কারো কাছে শোনেন অল্প বয়সে সাংবাদিক হয়ে ওঠার কাহিনী। কে কোন স্কুলে পড়ে, কোন বিষয় পড়তে ভাল লাগে- সে খোঁজও তিনি নেন।

এ সময় ক্ষুদে সাংবাদিকদের ‘কঠিন কঠিন’ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয় সরকারের এই মন্ত্রীকে।

লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে এবার কতো কষ্ট করে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করতে হয়েছে সে বিষয়ে এক সময়ের ছাত্রনেতা নাহিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সী দুই শিশু সাংবাদিককে।

অন্যদিকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তুলে ধরেন স্কুল, শিক্ষক, পড়াশোনা; ইন্টারনেট, নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথা।

 

চা-চক্রে এক ক্ষুদে সাংবাদিক শিক্ষামন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি বলেছিলেন আমাদের কোচিং করতে হবে না। কিন্তু আমাদের তো এখনো কোচিং করতে হচ্ছে। কেন?”

মন্ত্রী জবাব দেওয়ার আগেই আরেকজনের প্রশ্ন, “সৃজনশীল প্রশ্নের অনেক কিছু শিক্ষকরা বোঝেন না, কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোতে সেগুলোর সমাধান পাওয়া যায়। কীভাবে?”

অনেকটা আত্মসমর্পণের ঢঙেই শিক্ষার্থীদের কাছে সময় চাইলেন নাহিদ।

“আমি জানি কোচিং সেন্টারগুলো এখনো চলছে। সব স্কুলগুলোর আশেপাশের চার-পাঁচতলা সব বিল্ডিং ভাড়া করে কোচিং সেন্টার খোলা হয়েছে। এগুলো আমি জানি। কিন্তু সব শিক্ষককে তো রাতারাতি সৃজনশীল প্রশ্নের বিষয়ে পারদর্শী করে তোলা সম্ভব নয়।”

এসএসসির সময় অবরোধ-হরতালের প্রসঙ্গ তুলে নাহিদ বলেন, “সবাই বলে আমার বাচ্চাটার পরীক্ষা দিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার তো ১৫ লাখ বাচ্চা পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা তো একটা দুইটা বাচ্চার বাবা-মা, আমি তো একাই ১৫ লাখ বাচ্চার বাবা।”

আর প্রতিমন্ত্রী পলককে দেখা যায় তার বিষয়- মোবাইল ইন্টারনেট, গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া, নতুন নতুন অ্যাপ নিয়ে শিশুদের সঙ্গে আলাপ জমাতে।

কেবল শিশুরা না, অনুষ্ঠানের আগে এবং চা চক্রের পরে অনেকটা সময় নিয়ে অভিভাকদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটান শিক্ষামন্ত্রী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। সেলফি তোলার অনুরোধেও হাসিমুখে সায় দিতে দেখা যায় তাদের।

এর আগে বক্তব্য দিতে এসে পলক উপস্থিত শিশু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমার সঙ্গে সেলফি তুলেছ কে কে হাত তোল।”

শিশু সাংবাদিকরা হাত তোলার পর এদিক-ওদিক তাকিয়ে পলক বলেন, “দেখতে পাচ্ছি বেশ কয়েকজন বাকি আছ। সমস্যা নেই। অনুষ্ঠানের শেষে আবার সেলফি হবে।”

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকার শিশু সাংবাদিক নাফিয়া ইসলাম তুলতুল (১২) ও নানজিবা ফাতেমা (১৫)।  বক্তব্যের ফাঁকে তাদের একজন ঘোষণা দেন, শিক্ষামন্ত্রীও অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের সঙ্গে কথা বলবেন।

দুইবারই মিলনায়তন ফেটে পড়ে শিশু সাংবাদিকদের তুমুল করতালিতে।

একজন অভিভাবক দীর্ঘসময় ধরে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে শিশুদের সেলফি তোলা দেখেন। মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েই তাকে বলতে শোনা যায়, “কোনো বাচ্চাকেই নিরাশ করেননি মন্ত্রীরা, এটা ভাল। সব বাচ্চাই খুব খুশি হয়েছে।”