‘সাংবাদিকই হব’

বয়সে হয়তো শিশু, কিন্তু যখন তারা সাংবাদিক, তখন ছাড় পান না মন্ত্রীরাও। ভবিষ্যতে আরও ‘তুখোড়’ সাংবাদিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন তাদের চোখে-মুখে।

কাজী শাহরীন হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 04:11 PM
Updated : 19 April 2015, 04:33 PM

রোববার এরকম প্রায় শ’দেড়েক শিশু সাংবাদিকের মেলা বসেছিল ‘আমার কথা আমাদের কথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। শিশু সাংবাদিকতায় বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে শিশু সাংবাদিকদের লেখা প্রতিবেদন ও রচনা নিয়েই এ বই।

এই শিশু সাংবাদিকদের অনেকেই হ্যালোর কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন বাছাই পরীক্ষা দিয়ে। এছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও হ্যালোর ওয়েবসাইটে দেওয়া নিবন্ধন ফরম পূরণ করে লেখা পাঠিয়েও শিশু সাংবাদিকতায় এসেছেন কেউ কেউ।

হ্যালোতে প্রকাশিত লেখা থেকে বাছাই করা ১০১টি প্রতিবেদন ও মতামত নিয়েই ‘আমার কথা আমাদের কথা’। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেলা ৩টা থেকেই তারা উপস্থিত হতে থাকেন রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের উৎসব হলে।

সিলেটের ব্লু বার্ড হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র রুহিন আহমেদ বলেন, “এই বইয়ে ‘গর্ব হয় আমি সাংবাদিক’ শিরোনামে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে আমার কথা নিয়েই। এ ছাড়া আরও দুটো লেখা ছাপা হয়েছে। সেগুলোর বিষয় গরীব পরিবারের সন্তান যারা পড়াশোনা করতে পারছে না তাদের নিয়ে।

“আমার ‘গর্ব হয় আমি সাংবাদিক’ লেখায় আমি বলেছি, বড় হয়ে আমি একজন সাংবাদিকই হতে চাই।”

এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিলেট থেকে একাই ঢাকা এসেছে রুহিন। আর ঠাকুরগাঁয়ের আমিনুর রহমান হৃদয় এসেছে সঙ্গে বাবাকে নিয়ে।

পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হৃদয় আগে থেকেই স্থানীয় পত্রিকায় লিখতেন ‘নবীন সাংবাদিক’ হিসাবে।

“একদিন শিশু সাংবাদিকতা নিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে হ্যালোর ওয়েবসাইট খুঁজে পাই। আমার জেলায় হ্যালোর বাছাই পরীক্ষা হয়নি। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করে লেখা পাঠানোর পর আমার লেখাও প্রকাশিত হয়েছে।”

হৃদয় জানালেন, আগে বাবা-মা সবকিছু বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দিতে বলতেন। কিন্তু ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তারাও হ্যালোর কাজ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

অনুষ্ঠানে হৃদয়ের পাশেই ছিলেন তার বাবা মো. আবুল কাশেম। ঠাকুরগাঁ সরকারি কলেজের এই প্রধান সহকারী জানালেন, ছেলের কাজ নিয়ে তিনি ‘গর্বিত’।

স্বীকৃতি না পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা, মাদকে আসক্ত হয়ে পড়া শিক্ষার্থী এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা নিয়ে হ্যালোতে লিখেছেন হৃদয়।

এই বয়সে সাংবাদিক হিসেবে বড় বড় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কেমন অনুভূতি হয় জানতে চাইলে হৃদয় বলেন, “শিশু সাংবাদিক হিসাবে অনেক গুরুত্ব দিয়ে তারা আমাদের কথা শোনেন। আমাদের ইউএনও স্যার তো আমার কাছে জানতে চান কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার আগে আমি পড়াশোনা করে জেনে নিয়ে যাই।”

একই কথা জানালেন ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সজিবুল হাসান।

“যে কোনো জায়গায় শিশু সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলে তারা গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেন। আমরা কী বলতে চাই তা-ও আগ্রহ নিয়ে শোনেন তারা।”

সজিবুলের দুটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা আমাদের কথা’ বইয়ে। এর একটি বেকারির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে, অন্যটির বিষয় মশার উপদ্রব।

লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ‘ধরে রাখার’ পরিকল্পনা জানালেন এই শিশু সাংবাদিক। 

রাজশাহীর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি দেওয়া জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, “রসায়ন বিষয়টা আমার পছন্দ। আবার ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেলেও ভর্তি পরীক্ষা দেব। তবে অন্য কোনো পেশায় গেলেও সাংবাদিকতা করার ইচ্ছা আছে।”

জুবায়ের জানান, তার বাবা রাজশাহী আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছোটবেলা থেকেই খবর, টেলিভিশনের ‘টক শো’ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেই আগ্রহ থেকেই শিশু সাংবাদিকতায় আসা।

একই কথা বললেন ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নানজিবা ফাতেমা।

“আমার পরিকল্পনা হলো টেলিভিশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে পিএইচডি করা। সাংবাদিকতা আমার ভালো লাগে, তাই এটা ধরে রাখার ইচ্ছাটাই বেশি।”

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মো. সাবিক আল আজাদ ও রাফসান তালিম যোগ, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দশম শ্রেণি তানজুম রহমান, রূপনগর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাবিকুন নাহার- সবার চোখেই দেখা গেল একই স্বপ্নের আভা।  

শিশুদের সংগ্রহ করা খবর নিয়ে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ যাত্রা শুরু করে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত এই ওয়েবসাইট। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।

সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।