টিআইবি-সুজনের ‘মুখোমুখিতে’ নেই মনজুর-নাছির-শেঠ

চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থীদের ভোটারের মুখোমুখি করতে টিআইবি-সুজনের অনুষ্ঠানে মনজুর আলম, আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সোলায়মান শেঠসহ সাত মেয়র প্রার্থী হাজির হননি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 02:51 PM
Updated : 19 April 2015, 03:30 PM

রোববার বিকালে নগরীর মুসলিম হলে ‘মুখোমুখি’ নামে এই অনুষ্ঠানে পাঁচ মেয়র প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন কর।

উপস্থিত মেয়র প্রার্থীদের কারো কারো বক্তব্য এবং ভোটারদের করা প্রশ্নের বিপরীতে দেওয়া উত্তর উপস্থিতির মধ্যে ব্যাপক হাস্যরসের জন্ম দেয়।

এক পর্যায়ে আয়োজকরা অনুষ্ঠান শেষ করতে সমবেতদের সহায়তাও কামনা করেন।  

অনুপস্থিত মেয়র প্রার্থীরা হলেন বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন, জাতীয় পার্টি সমর্থিত সোলায়মান আলম শেঠ, বিএনএফের আরিফ মঈনুদ্দিন, মো. শফিউল আলম, মো. আবুল কালাম আজাদ ও সাইফুদ্দিন আহমদ রবি।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “৮-১০ বার প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে গিয়েছি। তাদের মুরুব্বিদের দিয়ে বলিয়েছি। আমাদের দাওয়াতের চিঠি তারা গ্রহণ করেছে। উনারা আসেননি। উনাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “প্রার্থীদের সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। তারা আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

“কেন আসেননি সেটা তারাই ভালো জানেন। আমাদের তো কিছু করার নেই।”

প্রশ্নোত্তরে হাস্যরস

নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টার পরিবর্তে অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল চারটা ৫৫ মিনিটে।

একে একে নাম ঘোষণার পর মঞ্চে আসেন যথাক্রমে ইসলামী আন্দোলনের ওয়ায়েস হোসেন ভুঁইয়া, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, ইসলামীক ফ্রন্টের হোসেন মোহাম্মদ মজিবুল হক, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ও মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী।

এম এ মতিনের নাম ঘোষণার পর উপস্থিতরা টানা দুই মিনিট করতালি দিতে থাকেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক নাগরিকের মতে দেশের সিটি করপোরেশনগুলো আরও ভালো চলা উচিত। বঞ্চিত নাগরিকরা অসন্তুষ্ট। আগামী দিনে যিনি মেয়র হবেন তাকে বাজিয়ে দেখতে এ আয়োজন।

“এখানে আসা বাধ্যতামূলক ছিল না। যারা এসেছেন তাদের সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ।”

মেয়র প্রার্থী ওয়ায়েস হোসেন ভুঁইয়া জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার আশ্বাস দিয়ে এবারের সিটি নির্বাচনকে ১০ম নির্বাচন (আসলে পঞ্চম) বলে উল্লেখ করেন।

ভোটার নুরুল কবির জলাবদ্ধতা নিরসনের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়ায়েস বলেন, খাল খনন-স্লুইস গেট নির্মাণ ও পানি অপসারণে পাম্প বসাতে হবে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয়। বছরে ১৫ দিন পাম্প চালালেই জলাবদ্ধতা হবে না।  

‘পাম্প বসিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন করার’ উপায় বাতলানোতে ভোটাররা হাসতে শুরু করেন।

মেয়রপ্রার্থী হোসেন মোহাম্মদ মজিবুল হক বিশ্বমানের নগরীর গড়ার কথা জানিয়ে নির্ধারিত পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে মাত্র এক মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন।

এক ভোটার হলফনামায় উল্লেখ করা ‘স্বশিক্ষিত’ যোগ্যতা নিয়ে কি করে বিশ্বমানের নগরী গড়তে চান প্রশ্ন করেন।

জবাবে মজিবুল হক বলেন, “তিন বারের একজন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ছিল? দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত আমি। সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করব।”

মেয়র প্রার্থী সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ২০২০ সালের নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন শুরুতেই।

নিজের প্রতিশ্রুতি জানাতে গিয়ে এক পর্যায়ে ‘সাংবাদিক মুক্ত’ চট্টগ্রাম গড়ার ঘোষণা দেন জোহা। পরক্ষণেই ‘সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত’ বলে সংশোধন করেন।

প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্যের সময় হাত তুলে সমবেতদের তার প্রতি সমর্থন জানাতে বলেন। এসময় আয়োজকরা আপত্তি জানালে তিনি আহ্বান প্রত্যাহার করেন।

পাঁচশ টাকায় ভোট বিক্রি করতে ভোটারদের নিষেধ করে জলাবদ্ধতা বিষয়ে আলাউদ্দিন বলেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে কমিটি করা হবে। সিটি করপোরেশন কোনো দল নয়। সন্ত্রাস…।

হঠাৎ করে এরকম অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যে মিলনায়তনে হাসির রোল পড়ে। পরে সঞ্চালক অনুষ্ঠান শেষ করতে সমবেতদের সহায়তা কামনা করেন।

শেষ বক্তা মেয়র প্রার্থী এম এ মতিনের বক্তব্যের সময় তুমুল করতালি পড়তে থাকে। তাকে প্রশ্ন করতে একসঙ্গে ত্রিশ জনের মত হাত তোলেন।

এক পর্যায়ে এনামুল হক নামের এক ভোটার এম এ মতিনের ইশতেহারে থাকা বিদ্যুৎ বিল মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে সঞ্চালক প্রশ্নটি সিটি করপোরেশনের আওতাবহিভূর্ত বলে প্রত্যাখান করেন।

উপস্থিত ভোটারদের অধিকাংশই ছিলেন আলকরণ, বাকলিয়া, কোতোয়ালী ও বাগমনিরাম এলাকার বাসিন্দা।