রোববার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনের শুনানি শুনে আদালত বুধবার পর্যন্ত তা মুলতবি করেন।
আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা শুনানি মুলতবির আবেদন জানান। আবেদনের কারণ হিসেবে আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনকে দেখান ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল।
মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত তা নামঞ্জুর করে শুনানি শুরুর নির্দেশ দেন।”
বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য খালেদার আবেদনগুলো আংশিক শ্রুত হিসেবে আদালতের কার্যতালিকায় আসবে বলে তিনি জানান।
রোববার শুনানির জন্য খালেদার চারটি আবেদন কার্যতালিকায় ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২ নম্বর ক্রমে ছিল। এতে সময় লেখা ছিল ২টা।
বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলায় খালেদার পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনকে আসামি। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এই মামলায়।
২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার।
সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।
গত ৩ ও ৫ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য ১০ মার্চ দিন রাখে। পরে তা পিছিয়ে ৫ এপ্রিল (রোববার) নতুন তারিখ রাখা হয়।
এরই মধ্যে খালেদার আইনজীবীরা বেঞ্চ পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এরপর গত ২ এপ্রিল তারা ওই আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি খালেদার আবেদন শুনানির জন্য বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্টে বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলা হয় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর, পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এতে অভিযোগ করা হয়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ৯ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল। সেই স্থগিতাদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগেও; ফলে মামলাটি আটকে যায়।
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর, পরে তা জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে সদ্যপ্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে দুদক।
এই মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা।
তিন দিন পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।
দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।