বিএনপি মানেই যন্ত্রণা: হাসিনা

নাশকতার জন্য বিএনপি জোটকে প্রত্যাখ্যান করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2015, 02:33 PM
Updated : 18 April 2015, 04:19 PM

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে শনিবার গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেলের প্রকল্প উদ্বোধন করে বলেছেন, “বিএনপি মানেই ধ্বংস, বিএনপি মানেই যন্ত্রণা, বিএনপি মানেই জাতির জন্য উৎপীড়ন।”

গত তিন মাসে বিএনপির সহিংস আন্দোলনের প্রাণহানি ও ধ্বংসচিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়ার কাছে তার জবাবদিহি নিতেও জনগণকে আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বিকালে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের ঘণ্টাখানেক আগেই সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গুলশানে জনসংযোগ চালান খালেদা জিয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, “যখনই উনি রাস্তায় নামবেন, তখনই উনার কাছে জানতে চাইতে হবে- এতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন, তার জবাব দেন? কোন অধিকারে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন?

“তিনটি মাস ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে। সরকারে থাকলেও মানুষ মেরেছে। সরকারে না থাকলেও মানুষ মারে। ৯২ দিন দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কেটেছে।”

“বেগম জিয়াকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে, এগুলো করে কী পেলেন?” লাগাতার অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “এ রকম বীভৎস কাণ্ড-কারখানা বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি, যা বিএনপি দেখিয়েছে। মানুষের দুর্ভাগ্য সৃষ্টি করার তাদের (২০ দলীয় জোট) কাজ।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করতে লাগাতার অবরোধ ডেকে তিন মাস কার্যালয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গত ৫ এপ্রিল ঘরে ফেরেন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, “তাকে কোর্টেও হাজির হতে হল, ব্যর্থ মনোরথে ঘরেও ফিরতে হল।”

বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কারা মানুষের উন্নয়ন চায়? কারা মানুষের কল্যাণ চায়?

“খালেদা জিয়া ও জামাত দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে-তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই। আপনারা কীভাবে ধারণা করতে পারলেন, তারা দেশের মানুষের উন্নয়ন করবে।”

লাকসামে অবস্থানরত দুই মন্ত্রী মুজিবুল হক ও আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রেলের দুটি প্রকল্প উদ্বোধন এবং একটির ভিত্তি স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবনকে সুন্দর করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে তার সরকার।

‘লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন নির্মাণ’ ও ‘চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড রি-মডেলিং’ কাজ উদ্বোধন এবং ‘লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ কাজের ভিত্তিস্থাপন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের ৪৬টি নতুন প্রকল্প এবং ১৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯টি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ৪১টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

এই সময়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে, মংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে, ঈশ্বরদী হতে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন ৭৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ চলছে, কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ-পাটগাতী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটে ঘুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হবে, দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশন ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ চলছে।

২০০৯ সাল থেকে মোট ৪৭৪ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ সালের শুরু থেকে অদ্যাবধি আমরা আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ সর্বমোট ৯২টি নতুন ট্রেন বিভিন্ন রুটে চালু করেছি এবং ২৪টি ট্রেনের সার্ভিস বর্ধিত করা হয়েছে।”

রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য ২০ বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তিনটি পর্যায়ে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।