নির্বাচন কমিশনে ‘প্রতিকার’ না পাওয়ার অভিযোগ বিএনপির

সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হলেও তারা কিছু করছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2015, 09:10 AM
Updated : 24 April 2015, 07:29 AM

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার পরিচালনায় গঠিত সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন।

শুক্রবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই বৈঠকের পর হান্নান শাহ বলেন, “গতকাল একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

“নির্বাচন কমিশনে মানুষ আছেন। তারা সব কিছু চোখে দেখছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিকার নেই।”

নির্বাচনী আচরণ বিধি তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের ‘চোখে দেখা যায় না’ বলে অভিযোগ করেন হান্নান শাহ।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয় না। ভোটের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েন করা না হলে ধরে নিতে হবে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।”

বিএনপির ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণে দলের সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন।

তার নির্বাচনী প্রচার পরিচালনায় আ স ম হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল মান্নান, অধ্যাপক এম এ মান্নান, শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালামসহ এই কমিটিতে দলের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলরদের রাখা হয়েছে।

সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। তিনি কারাগারে থাকায় দায়িত্বপালন করবেন যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

হান্নান শাহ বলেন, ঢাকা দক্ষিণের প্রচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ৫৭টি ওয়ার্ডকে আটটি সেক্টরে ভাগ করে নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা অতীতের সব সিটি নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছি। ঢাকায়ও আমরা জনগণের ম্যান্ডেট পাব ইনশাল্লাহ।”

নির্বাচনের ‘সুষ্ঠু’ পরিবেশ তৈরির জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা পেশী শক্তিতে বিশ্বাস করি না, ব্যালটে বিশ্বাস করি বলেই এই নির্বাচনে এসেছি। তাই এখনো বলছি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করুন। প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করুন, প্রচারণায় সমান সুযোগ সৃষ্টি করুন।”

নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচনী প্রচারের সমন্বয় কমিটির দপ্তর হচ্ছে বলে জানান তিনি।

দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে হান্নান শাহ বলেন, “সমন্বয় কমিটির কাজ হচ্ছে নির্বাচনের পুরো সময়ে প্রার্থী ও কর্মীদের কাজের সমন্বয় ও তদারক করা। ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের পর কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রচারণায় নামবেন কি না জানতে চাইলে হান্নান শাহ বলেন, “দেশনেত্রী ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন, প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে তিনি প্রচারণায় নামবেন। নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে তার ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যদি প্রচারণায় নামেন, তা যথাসময়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”

মন্ত্রী ও সাংসদরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সমন্বয় কমিটির সভায় অন্যদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল হাই, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সানাউল্লাহ মিয়া, শাহজাহান মিলন, শাহজাদা মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, মিজানুর রহমান, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা, জোট নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাইফুদ্দিন মনি, আবুল কাশেম, শামসুদ্দিন পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।

‘ভোটেই জবাব দিতে হবে’

ভোটের মাধ্যমে ‘গুম-খুন’র জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আর ঘরে বসে থাকা নয়, ২৮ এপ্রিল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই সরকারের গুম-খুনের বিরুদ্ধে জবাব দিতে হবে।”

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা ফোরাম’র উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

সভায় অন্যদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।