বর্ষবরণে যৌন হয়রানি জাবিতেও

বাংলা নববর্ষের উৎসবের দিন ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2015, 02:49 PM
Updated : 16 April 2015, 04:56 PM

ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

তিনি ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ ওঠার ওপর ওই নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার করেছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।

অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তপন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু এটা যৌন নিপীড়নের ঘটনা, তাই আমরা এটাকে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলের কাছে হস্তান্তর করেছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আক্তার বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেলের সভা আহ্বান করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র নিশাত ইমতিয়াজ, সালাম-বরকত হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র নাফিস ইমতিয়াজ, ছাত্রলীগকর্মী নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আব্দুর রহমান ইফতি, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের রাকিব এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের নুরুল কবির।

এরা সবাই শহীদ সালাম-বরকত হলের ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

রাজিব সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ওই পাঁচজনকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছি। একই সঙ্গে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

নির্যাতিত ছাত্রীর অভিযোগ, পহেলা বৈশাখ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরাঙ্গী এলাকায় তিনি ও তার এ সহপাঠির ওপর হামলা হয়।

ওই ছাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিভাগের অনুষ্ঠান শেষে আমরা হলের দিকে যাচ্ছিলাম। চৌরাঙ্গী মোড়ে সালাম-বরকত হলের ওই পাঁচজন ছাত্র আমাদের থামায়। আমরা পিছু নিলে তারা আমাদের ঝোপের আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।”

হামলাকারীদের একজন ওই ছাত্রীর শাড়ি ধরে টান দেয় বলে সঙ্গে থাকা তার সহপাঠি জানান। তিনি বলেন, “আমরা চিৎকার শুরু করলে তারা চলে যায়।”

এই ঘটনা নিয়ে প্রশাসনে অভিযোগ দিলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ওই দুই শিক্ষার্থী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিতের দাবিও জানায়।

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই ঘটনায় প্রশাসনকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার এবং এই ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানাই।”

‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’- এর সংগঠক সুজা উদ দোলা বলেন, “সদাজাগ্রত প্রতিবাদী জাবি কখনোই অন্যায় অত্যাচার মেনে নেয়নি, এখনও নেবে না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির এই ঘটনার যথাযথ বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ।

সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এর আগেও বর্ষবরণের দিনে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দোষীদের প্রতি প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টের কারণে বার বার দোষীরা পার পেয়ে যায়।”