নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোট কেন্দ্র ও ভ্রাম্যমাণ হিসেবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রায় ৬৫ হাজার সদস্যকে মাঠে নামানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি থাকলেও এখনই সে বিষয়ে ভাবছে না নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক চূড়ান্ত বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এরইমধ্যে বলেছেন, ভোটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ১৯ এপ্রিল আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনা মোতায়েন করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানিয়েছেন।
ওই বৈঠকে পর্যালোচনার জন্যে প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ভোট ঘিরে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ভোটের দুই দিন আগে ২৬ এপ্রিল থেকে ভোটের পরদিন ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে। ভোটের আগের দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী মালামাল নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে অবস্থান নেবেন।
ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি উঠলেও এর আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না হওয়ায় এবারো সে বিষয়ে প্রস্তাবনা রাখছে না নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
“রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিবেদন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের পর্যালোচনায় সেনা মোতায়েনের বিষয়টি এলে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন একজন ইসি কর্মকর্তা।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।
৬০ লাখেরও বেশি ভোটারের এ তিন সিটিতে মেয়র পদে ৪৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে এক হাজার একশ’র বেশি প্রার্থী রয়েছে।
ঢাকা উত্তরের ১০৯৩ ভোট কেন্দ্র, দক্ষিণের ৮৮৯টি কেন্দ্র ও চট্টগ্রামের ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং ও সহকারী পোলিং অফিসার নিয়ে অর্ধ লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকছেন ভোটের দিন।
নির্বাচন কমিশনের বাজেট শাখার উপ সচিব শাহজাহান খান জানান, তিন সিটিতে নির্বাচন পরিচালনার দ্বিগুণের বেশি ব্যয় হবে আইন শৃঙ্খলায়। এজন্য এরইমধ্যে অর্থ ছাড়ও দিয়েছে অর্থবিভাগ।
ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের জন্য ৪৫ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ৩৫ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। আর চট্টগ্রামের জন্য ১৫ কোটি টাকা প্রস্তুত রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা বাড়লে বাড়তি অর্থের দরকার হলে তা পেতে অসুবিধা হবে না বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তা শাহজাহান।
নিরাপত্তা পরিকল্পনা
আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা হবে। সেসব কেন্দ্র ও সাধারণ বিবেচনার ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদারে কেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কতোজন সদস্য মোতায়েন করা হবে তা ঠিক হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ বিবেচনায় দুই হাজার ৭শ’ ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৬২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকবেন।
“২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল- এ চার দিনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম নিয়োগ করা যেতে পারে,” নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছেন কি না তা তদারকিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে ২৪ জন নির্বাহী হাকিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় রয়েছেন।
ভোটের দিন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে অন্তত ২৮৬ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত থাকবেন।
ভোটের আগে-পরে চার দিন ঢাকা উত্তরে নয় জন, দক্ষিণে ১৪ জন ও চট্টগ্রামে ১০ জন বিচারিক হাকিমও নিয়োজিত থাকবেন।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, “একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটের দিনে কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা রয়েছে, পাড়া- মহল্লায় ভোটারদের নির্বিঘ্নে আসার একটা পরিকল্পনা রয়েছে, স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স রয়েছে।”
ভোটের দিন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মিলিয়ে ঢাকাকে কঠোর নিরাপত্তার জালে ঢেকে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রচারণা বন্ধ, বহিরাগত ও যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
২৫ এপ্রিল রাত ১২টার পর বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
২৬ এপ্রিল মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান, এতে যোগদান, কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন।
২৫ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে মটরসাইকেল এবং ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে যান চলাচলের ওপর কড়াকড়ি থাকবে। প্রার্থী, প্রশাসন ও অনুমোদিত ব্যক্তি এবং মহাসড়কসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে যান চলাচলে ছাড় দেওয়া হবে।