এবার মাথা প্রতিস্থাপন

নিজের মাথা ভিন্ন শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী রাশিয়ান নাগরিক ভ্যালেরি স্পিরিদোনভ। পরিকল্পনামাফিক সব ঠিক থাকলে ২০১৭ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো মানুষের মাথা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করবেন চিকিৎসকরা।

আব্দুল্লাহ জায়েদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2015, 07:59 AM
Updated : 13 April 2015, 07:59 AM

প্রাণঘাতী পেশী-ক্ষয়রোগ স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ) ভুগছেন স্পিরিদোনভ। নিজের জীবন রক্ষার জন্যই নিজের মাথা প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুগান্তকারী এই অপারেশনের মূল কাণ্ডারি হিসেবে থাকবেন ইতালিয়ান চিকিৎসক ড. সের্গেই ক্যানাভেরো। সব মিলিয়ে ৩৬ ঘণ্টার অপারেশনে অংশ নেবেন দেড়শ চিকিৎসক ও নার্স।

অপারেশনে স্পিরিদোনভের মাথা কেটে বসানো হবে ‘বেইন ডেড ডোনার বডি’তে। মস্তিষ্ক মৃত হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে ওই দাতার শরীর। এখানেই শেষ নয়, দাতা শরীরের স্পাইনাল কর্ড ও জাগুলার ভেইনের স্পিরিদোনভের স্পাইনাল কর্ড ও জাগুলার ভেইন সফলভাবে সংযুক্ত করতে না পারলে ব্যর্থ হবে অপারেশন।

মাঝে বাধ সেধেছে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ। ‘শরীর ও আত্মা অবিচ্ছেদ্য’ হওয়ায় এই অপারেশন ধর্মীয় বিশ্বাসবিরোধী বলে ঘোষণা করেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ। এই অপারেশন নিয়ে সমালোচনা চলছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতেও।

এ ব্যাপারে স্পিরিদোনভের বক্তব্য, “আমি ভয় পাচ্ছি, কিন্তু যে ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারছে না, সেটা হল আমার হাতে অন্য কোনো উপায় নেই। প্রতিবছর আমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আমার মা তার আশীর্বাদ দিয়েছেন। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।”

চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতেও এই অপারেশন নিয়ে সমালোচনা চলছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।  

“এমনটা কারও সঙ্গে হোক তা আমি কখনও চাই না। আমি কাউকে এমনটা করতেও দিতাম না। কারণ, মৃত্যুর থেকেও খারাপ অনেক কিছুই আছে।”-- মন্তব্য করেছেন অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউরোলজিকাল সার্জনসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ড. হান্ট ব্যাটজার।

এক শরীর থেকে মাথা কেটে অন্য শরীরে বসালে ওই ব্যক্তি নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতার আশংকা থাকে। ওই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর আশংকাই বেশি।

অন্যদিকে স্পিরিদোনভের অপারেশনের মূল উদ্যোক্তা ড. কানাভেরোকে ‘উন্মাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ল্যাঙ্গন মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক আর্থার কাপলান।

মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের এটাই প্রথম ঘটনা হলেও ১৯৭০ সালে বানরের উপর পরীক্ষামূলকভাবে এই অপারেশন চালানো হয়েছিল। স্পাইনাল কর্ড সঠিকভাবে সংযুক্ত করতে না পারায় শ্বাসকষ্ট ও পঙ্গুত্বে ভুগে ৮ দিনের মাথায় মারা যায় ওই বানর।

নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত সার্জন ভ্লাদিমির দেমিকভ অপারেশন করে ২০টি কুকুরের শরীরে বাড়তি মাথা জুড়ে দিয়েছিলেন। এক মাসের বেশি সময় বাঁচেনি ওই কুকুরগুলো।

মানবশরীরের ক্ষেত্রে সফলভাবে মাথা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ান ন্যানো-বায়ো রিসার্চার আলেক্সান্দার জাভোরোনভ। তবে পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি বেশি সময় বাঁচবেনা না বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।