মেঘনায় ট্রলার দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৪ মৃতদেহ উদ্ধার

গজারিয়ার ভাসানচরের কাছে মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ও বাল্কহেডের সংঘর্ষের ঘটনায় এক শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2015, 06:11 AM
Updated : 2 April 2015, 11:43 AM

গজারিয়া থানার ওসি ফেরদৌস হোসেন জানান, বুধবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় পর উদ্ধারকর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে।

“এর আগে দুর্ঘটনার পর রাতেই ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড উদ্ধার কাজ শুরু করে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে।”

উদ্ধার চারজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

এরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মুনির হোসেনর মেয়ে মুনিয়া আক্তার (৪) ও কুমিল্লার হোমনার সুভরাম গ্রামের শামিমের ছেলে হাবিব (১৬)।

এর আগে এ ঘটনায় মোট পাঁচটি লাশ উদ্ধারের করা কথা জানিয়েছিলেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলের কাছ থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের লাশটি উদ্ধার করায় সেটি ট্রলার যাত্রীর বলে ধরে নিয়েছিল পুলিশ।

পরে গজারিয়া ওসি ফেরদৌস বলেন, “দুর্ঘটনাস্থলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হলেও লাশটি দেখে মনে হয়েছে আরও আগে তার মৃত্যু। তাই এটিকে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন জানান, “বৃহস্পতিবার দুপুরের সর্বশেষ লাশ দুটি ডুবে যাওয়া ওই ট্রলার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর সকালে গজারিয়ার মোল্লাকান্দি থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক ও শিশু মুনিয়ার লাশ উদ্ধার হয়।”

এদিকে সব লাশের পরিচয় শনাক্তের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানিয়েছেন।

যাত্রীদের বরাত দিয়ে গজারিয়া থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, মা-বাবার দোয়া নামের বাল্কহেডটি বালু ভর্তি করে ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে রাত ৮টার দিকে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রলারটির মাঝ বরাবর ধাক্কা দেয়। ওই সময় ট্রলারে অন্তত ৭৫ জন আরোহী ছিলেন।

“সংঘর্ষের পর বাল্কহেডটি ট্রলারের গায়ে আটকে যায়। কোনোভাবে এ দুটিকে পৃথক করতে না পেরে চালক ও কর্মচারীরা তাদের নৌযান রেখেই পালিয়ে যায়।”

ওই অবস্থায় ভাসতে ভাসতে দুর্ঘটনাকবলিত নৌযান দুটি প্রায় আধা কিলোমিটার উত্তরে গজারিয়ার ছোট ভাসানচর এলাকায় পৌঁছে যায়। তবে বাল্কহেডে আলো জ্বালানো থাকায় রাতেই নৌযানদুটো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।

নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন রাতেই উদ্ধার কাজ শুরু করে। আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ পাওয়া যায় ট্রলার ও বাল্কহেডের মাঝামাঝি স্থানে।

এএসপি মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও কতজন নিখোঁজ তা বলা যাচ্ছে না। লাশগুলো স্থানীয় বউশিয়া ঘাটে রাখা হয়েছে। ট্রলার ও বাল্কহেডটি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছোট বসুর চরে।”

ট্রলারের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলছেন, গজারিয়ার ভাসানচর, কুমিল্লার মোল্লাকান্দি এবং চাঁদপুরের নবীপুরার মোহনায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

ট্রলারের যাত্রী ঢাকার বাদামতলীর ধনিয়ার মো. শামীম বেঁচে গেলেও তার দশ বছরের সন্তান ফয়েজের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলেও এসআই হাবিবুর জানান।

ট্রলারের আরেক যাত্রী নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পিয়াস (২৫) জানান, তারা মেঘনা-গোমতী সেতুর (দাউদকান্দি সেতু) বাউশিয়ার লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে করে চাঁদপুরের বেলতলীর লেংটার মেলায় যাচ্ছিলেন।

“রাত সাড়ে ৭টায় ট্রলারটি ছাড়ে। মূল মেঘনা নদীর মোহনায় ঝড়ের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বেশকিছু যাত্রী আহত অবস্থায় তীরে উঠে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান।”