‘আমাদের মতো হতে পারবেন না’

দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এটি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 06:11 PM
Updated : 1 April 2015, 06:11 PM

তার মতে, জনগণের আস্থা অর্জনের বিষয়টিতে দুদককে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত ‘দুর্নীতি বিরোধী সপ্তাহের’ শেষ দিনে এক সেমিনারে দুদককে উদ্দেশ করে শামসুল হুদা বলেন, “আমি নিজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলাম। একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না। আপনারা আমাদের মতো হতে পারবেন না।

“গত তত্ত্বাবধায়ক এবং আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আমাদের যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, আমাদের কাজের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের যতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করার কথা ইসি ততটুকু স্বাধীনতা ভোগ করে।”

“অধিদপ্তরের স্ট্যাটাস থেকে দুদককে অবমুক্ত করতে হবে।”

১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার প্রথমবারের মত দুর্নীতি দমন আইন প্রণয়ন করে। এই আইন অনুসারে পরে পাকিস্তান আমলে গঠন করা হয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো।

পরে বিএনপি সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর নামকরণ হয় দুর্নীত দমন সংস্থা এবং একে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়।

এরপর ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪’ অনুযায়ী কমিশনের মর্যাদা পায় এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্নীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে শামসুল হুদা বলেন, “প্রায়ই বলা হয় দুর্নীতির কারণে দেশে প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়, এটা সঠিক নয়। দুর্নীতির কারণে প্রবৃদ্ধিতে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন- এই দেশগুলো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। কিন্তু আমাদের দেশে মাইক্রো লেভেলে যে দুর্নীতি হয় ওইসব দেশে সেটা হয় না।”

টিআইবির কাজকর্মেরও ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের এই সদস্য।

“টিআইবির কাজ নিয়ে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুর্নীতি হয় সার্ভিস সেক্টরে, মাইক্রো লেভেলে। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষজন এইসব সার্ভিস সেক্টরের প্রতি বিরক্ত। টিআই এর বিদেশি কর্মকর্তারা যখন বাংলাদেশে আসেন তখন তারা সাধারণ মানুষের এই বিরক্তিটাকেই বড় করে দেখেন।”

দুদককে জনগণের আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি পত্রিকা বা টেলিভিশনে ক্রমাগত বলি যে আমরা নিজেরা এই কাজ করেছি, ওই কাজ করেছি, সেটা কোন সহযোগিতা করবে না। জনগণের আস্থা অর্জনটাই বড় বিষয় এবং সেজন্য সৎভাবে কাজ করে যেতে হবে।”

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান, দুদক কমিশনার এম সাহাবুদ্দিন ও নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সুজনের প্রধান নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ মোহাব্বত খান।