রাজশাহীতে বিমান বিধ্বস্ত, নারী প্রশিক্ষণার্থীর মৃত্যু

রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এক নারী বৈমানিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন এক প্রশিক্ষক।

বদরুল হাসান লিটনও আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 09:16 AM
Updated : 1 April 2015, 05:54 PM

বুধবার বেলা ২টার দিকে বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে মতিহার থানার ওসি সাইদুর রহমান জানান।

নিহত তামান্না রহমান (২২) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের মেয়ে। ঢাকার খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এলাকায় তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরে।

ওই বিমানের প্রশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ কামালও গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান জানান, ময়নাতদন্ত শেষে তামান্নার মরদেহ বিকালে ঢাকায় পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমির প্রধান কার্যালয়ে রাতে কফিন হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। 

ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে ‘এ’ লেভেল শেষ করা তামান্না বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমির পারসোনাল পাইলট লাইসেন্স কোর্সে (পিপিএল)ভর্তি হন দুই বছর আগে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১৬ ঘণ্টা ওড়ার পর মঙ্গলবার এককভাবে বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন তিনি।  

এই কোর্স শেষ করতে একজন বৈমানিককে নিজে ৫০ ঘন্টা বিমান চালাতে হয়। এর অংশ হিসাবেই প্রশিক্ষককে পাশে নিয়ে সেসনা ডি-১৫২ উড়োজাহাজটিতে উঠেছিলেন তিনি।  

বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমি অ্যান্ড জেনারেল অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিমানটি ৫০০ থেকে ৬০০ ফুট উপরে ওঠার পর ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি রানওয়ের মাঝামাঝি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

“ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হলে দুই বৈমানিক ইমার্জেন্সি এস্কেপের চেষ্টা করেন। এ সময় বিমানটি বিস্ফোরিত হয় এবং প্রশিক্ষণার্থী তরুণী বিমানের ভেতরেই জীবন্ত দগ্ধ হন।”

বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের এসআই এনামুল হক জানান,বিস্ফোরণের পর বিমানটি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে রানওয়েতে আছড়ে পড়ে। এ সময় প্রশিক্ষক সাঈদ কামালও দগ্ধ অবস্থায় ছিটকে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করার পর পুলিশ তাকে হাসপাতালে পাঠায়।”

খবর পেয়ে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য।

বিমানটি যেখানে আছড়ে পড়েছিল সেখানে একটি ভাঙা চাকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর বিমানটির টুকরো হয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল প্রায় ২৫ গজ দূরে। দেখা যায়, ককপিট, ইঞ্জিন পুড়ে প্রায় কয়লা গয়ে গেছে।

এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এর নেতৃত্বে আছেন সংস্থার পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) এস এম নাজমুল আনাম।

তামান্নার বাবা আনিসুর রহমান জানান, তার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে তামান্না সবার ছোট। বড় ছেলে লেখাপড়া করছে একটি বেসরকারি মেডিকেলে। 

বৃহস্পতিবার নিকুঞ্জ এলাকাতেই মেয়ের দাফন হবে বলে জানান এই চিকিৎসক। 

এর আগে ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এয়ার পারাবাতের একটি প্রশিক্ষণ বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকার পোস্তগোলায় বিধ্বস্ত হলে বৈমানিক ফারিয়া লারা ও রফিকুল মারা যান।