এভাবে ঘটা করে মন্ত্রীর কেন্দ্র পরিদর্শন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা হলেও বুধবার ‘দলবল’ নিয়েই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি পরীক্ষাকক্ষে ঢোকেন তিনি।
সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট পর ভিকারুননিসার ২১২ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন মন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ কে এম জাকির হোসেন ভূঁঞা, মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী এবং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষাকক্ষে ঢোকার আগেই হুড়োহুড়ি করে সেখানে অবস্থান নেন বিভিন্ন টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন ও আলোকচিত্রীরা।
অন্য পাবলিক পরীক্ষার সময় ক্যামেরাপার্সন ছাড়া অন্য কাউকে মন্ত্রীর সঙ্গে পরীক্ষাকক্ষে ঢোকার অনুমতি দেওয়া না হলেও বুধবার ৮-১০ জন প্রতিবেদকও বিনা বাধায় পরীক্ষাকক্ষে ঢোকেন।
সে সময় প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী ওই কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। মন্ত্রীর দলবল ও সংবাদকর্মীদের মিলিয়ে আরও অন্তত ৪০ জন যোগ হওয়ায় পরীক্ষাকক্ষ যেন হঠাৎ বাজারের রূপ নেয়।
কয়েকটি টেলিভিশনের সাংবাদিককে পরীক্ষাকক্ষেই তার ক্যামেরাপার্সনকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
উত্তর লিখতে ব্যস্ত এক পরীক্ষার্থীকে একজন আলোকচিত্রী ক্যামেরার দিকে তাকাতে অনুরোধ করেন কয়েকবার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালীকেও সঙ্গে থাকা ট্যাবে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছবি তুলতে দেখা যায়।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে মনোযোগ দিতে না পারায় কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে লেখা বন্ধ রেখে মন্ত্রীর দিকে তাকাতেও দেখা যায়।
পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে অন্তত তিন ডজন বাড়তি মানুষের এই হুড়োহুড়ি, কোলাহল আর ক্যামেরার জন্য তীব্র আলোক প্রক্ষেপণ চলে প্রায় আট মিনিট।
এ সময় যুগ্ম-সচিব জাকির হোসেন তথ্য কর্মকর্তা ঢালীকে বলেন, “এক রুমে বেশি ডিস্টার্ব হয়ে যাচ্ছে।”
এরপর তথ্য কর্মকর্তা ঢালীকে দেখা যায় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে। কয়েক মিনিট পর মন্ত্রী ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। সংবাদকর্মীরাও তাকে অনুসরণ করেন।
দুটি কক্ষ পরিদর্শনের কথা থাকলেও নাহিদ বলেন, “এক কক্ষেই তো ছেলে-মেয়ে সবাইকে পেয়ে গেলাম। তাই আর অন্য কক্ষে যাব না।”
তিনি বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিক) সবাইকে ধন্যবাদ-অভিনন্দন, সব সময় আপনারা আমাদের ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছেন।”
এভাবে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন নাহিদ।
“একটি ক্লাসরুম সবাই মিলে দেখে এলাম। নইলে বাইরে থেকে অনুমান নিয়ে কথা বলতে হত।”
এর আগে নাহিদ বলেছিলেন, কক্ষ পরিদর্শন নিয়ে সমালোচনা হলেও পরিদর্শনে না গেলে অনেকে ‘মন খারাপ করেন, সমালোচনা করেন’। তবে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা যেন না হয় তা নিশ্চিত করা হবে।
যে কক্ষ পরিদর্শন করা হয় সেই কক্ষের পরীক্ষার্থীদের কয়েক মিনিট বেশি সময় দেওয়া হয় বলেও এর আগে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
সাংবাদিকদের নাহিদ বলেন, “সারা দেশেই সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষা হচ্ছে। সকালে বোর্ড কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আমরা এই খবর পেয়েছি। হরতাল-অবরোধ হোক বা নাই হোক সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হবে।”
অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা দিতে আসা কোনো পরীক্ষার্থীর ‘ক্ষতি’ হলে বিএনপি জোটকে তার দায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াও শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী।
পরীক্ষা শুরুর আগে বৃষ্টির মধ্যেই ভিকারুননিসা পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ।