আরো চার দিন পেলেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য আরও চার দিন সময় পেয়েছেন তার আইনজীবীরা।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 03:49 AM
Updated : 1 April 2015, 10:39 AM

বুধবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানির জন্য আগামী ৫ এপ্রিল নতুন দিন ঠিক করে দেয়।

এই শুনানি শুরুর আগে চার সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা।

আসামিপক্ষের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন শুনানিতে বলেন, “আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন অসুস্থ। তাই আমরা সময় চাইছি।”

এ সময় আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “কাল তাকে টিভিতে প্রেস ব্রিফিং করতে দেখেছি। সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে তামাশা করছেন? একই যুক্তিতে এর আগেও সময় নিয়েছেন।”

জয়নুল এ সময় বলেন, “উনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।”

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “গতকালও আইনজীবী সমিতির একটি সভায় তিনি (খন্দকার মাহবুব হোসেন) সভাপতিত্ব করেছেন।

এরপর জয়নুল এক সপ্তাহ সময় চাইলেও আদালত রোববার শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেয়।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির এই আপিল বেঞ্চ গত ৯ মার্চ আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ১ এপ্রিল শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েছিল।  সে অনুযায়ী বিষয়টি বুধবারের কার্যতালিকায় আসে।

শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “রিভিউ পিটিশন শুনানির জন্য আজ লিস্টে ছিল। আমরা প্রস্তুত হয়েই গিয়েছিলাম, হয়তো আজ শুনানি হবে। এর মধ্যে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চার সপ্তাহ সময় চেয়ে দরখাস্ত করেছেন।

“আমি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দাঁড়িয়ে প্রবল বিরোধিতা করেছি, বলেছি তাদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের বরাত দিয়ে যে সময় চাওয়া হয়েছে, তা শুধু মামলাটি বিলম্বিত করার জন্য, কালক্ষেপণের জন্য।”

আদালত সময়ের আবেদন ‘আংশিক মঞ্জুর’ করে আসামিপক্ষকে রোববার পর্যন্ত সময় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও আসামিপক্ষে একাধিক আইনজীবী রয়েছেন। সুতরাং একজন আইনজীবীর জন্য একটি বিচার কাজ বন্ধ থাকতে পারে না।

“গত তারিখে খন্দকার মাহবুব হোসেন নির্বাচন করবেন বলে সময় চেয়েছিলেন। আদালত সময় দিয়েছেন। আজ বলা হচ্ছে উনি অসুস্থ। অথচ উনি মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করছেন, প্রেস ব্রিফিং করছেন। একজন মক্কেলের জন্য আইনজীবীর সব ধরনের দরখাস্ত করা সঠিক বলে আমি মনে করি না।”

এতে আইনজীবী হিসাবে আচরণবিধি লঙ্ঘণ করা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা বুঝতে পারছেন না? সব কথা স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন হয় না।

“আদালত অনেক কিছু বুঝেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে মেনে নেন। বিলম্ব মার্জনার মতো আবেদন যে আমরা দেই, এর সব কথা যে সঠিক থাকে না, সেটা আদালত বোঝেন। ন্যায়বিচার যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য আদালত এই দরখাস্তগুলো বিবেচনায় নেন।”

গতবছর ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের এই বেঞ্চই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে। এই আপিল বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও  বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় এসেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে।

২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয়।

আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক। এরপর মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে, কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়।

মৃত্যু পরোয়ানা জারির চতুর্দশ দিনে গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিভিউ আবেদন জমা দেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী জয়নাল আমিন তুহিন। ৪৫ পৃষ্ঠার এই আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের খালাস চাওয়া হয়।

কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের রায়ে একজন বিচারক দণ্ডের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। তার পয়েন্টগুলো ধরেই তারা রিভিউ আবেদন করেছেন।

আসামিপক্ষ রিভিউয়ের আবেদন করায় কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেছে। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।

তবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের আগে রিভিউয়ের পর্যায়ে এসেছে।