‘ফরমালিন নয়, নজর দিতে হবে কীটনাশকে’

খাদ্যে ফরমালিন মেশানো নিয়ে হৈ চৈয়ের মধ্যে এ নিয়ে সময় ও সম্পদ নষ্ট না করে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) এক বিশেষজ্ঞ।

নূরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2015, 07:26 AM
Updated : 31 March 2015, 10:12 AM

খাদ্যপণ্যে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন জৈব যৌগ ফরমালিনের উপস্থিতি নির্ণয়ে জটিলতার বিষয়টি তুলে ধরে এ নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ শ্রীধর ধর্মপুরী বলেন, “ফরমালিন নয়, খাদ্যে যে কীটনাশক ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে তার দিকেই বাংলাদেশের বেশি নজর দেওয়া উচিত। কারণ এটি ফরমালিনের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।”

এফএওর সহযোগিতায় ঢাকায় স্থাপিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির অন্যতম বৈজ্ঞানিক ছিলেন ধর্মপুরী। রোববার ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

ওই সম্মেলনে কো-চেয়ার ছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক স্টিফেন লুবি ও এফএওর নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচির প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা জন রাইডার।

গত কয়েকবছর ধরেই দেশে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে,  ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় সরকার।

ফরমালিন হলো ফর্মালডিহাইডের একটি জলীয় দ্রবণ যা টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, কাগজ ও রঙ শিল্প এবং মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছ, শাকসবজি ও ফল দীর্ঘ সময় তাজা দেখাতে ফরমালিন ব্যবহার করেন।  

ফাইল ছবি

গতবছর ফরমালিনবিরোধী অভিযানে নেমে পুলিশ হাজার হাজার টন আম ধ্বংস করে। কিন্তু ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সরকারের ফরমালিনবিরোধী কর্মকাণ্ড অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে।    

এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকার জাতীয় সংসদে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৫’ পাস করে, যাতে লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

ফরমালিনবিরোধী অভিযান নিয়ে শ্রীধর ধর্মপুরী বলেন, “শুধু ধারণার ওপর নির্ভর করে নয়, বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই ধরনের অভিযান চালানো উচিত। কারণ এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি জড়িত।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশে খাদ্যে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ’, যা দিয়ে মূলত বায়ুর ফরমালিন পরিমাপ করা হয়।

রাজধানীতে পুলিশ ফলমূলে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর কোম্পানির ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার’ ব্যবহার করে, যা পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালডিহাইডের বাষ্প মাপার ‘সংবেদনশীল’ যন্ত্র। এর মাধ্যমে বাতাসে ফরমালডিহাইড গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

গতবছর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সঠিক যন্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ দেয়।

খাদ্য বিশেষজ্ঞ ধর্মপুরীর মতে শাকসবজি ও ফলে ফরমালিনের পরীক্ষারও প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, “নির্ণয় করা কঠিন হওয়ায় কোনো দেশেই খাদ্যে ফরমালিনের উপস্থিতির নির্দিষ্ট কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও শাকসবজিতে প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন মাত্রায় ফরমালিন থাকে।”

মাছে ফরমালিন মেশানো হলেও বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় রান্না হয়, তাতে এই রাসায়নিক উপাদানের কার্যকারিতা থাকে না বলেও মনে করেন তিনি।

ফাইল ছবি

তিনি জানান, গতবছর ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে তারা তিনটি পদ্ধতিতে খাদ্যের নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করেন। এসব পদ্ধতির মধ্যে পুলিশের ব্যবহৃত ‘ত্রুটিপূর্ণ’ যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষাও ছিল। তিনটি পরীক্ষায় তিন ধরনের ফলাফল এসেছিল।

“এর মানে হচ্ছে উপাদানটির পরিমাপ একটা কঠিন বিষয়। তাই এটি নিয়ে আমাদের সময় ও সম্পদ নষ্ট করা, কিংবা উদ্বিগ্ন হয়া উচিত নয়।”

এর চেয়ে খাদ্যে যে কীটনাশক ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার হচ্ছে, সেদিকে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

উদাহরণ হিসাবে তিনি একটি পরীক্ষায় হলুদে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি সীসা পাওয়ার তথ্য দেন।

কৃষকদের সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন শ্রীধর ধর্মপুরী।

আর খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরতে কীভাবে সেটা মেশানো হচ্ছে তার নমুনা পরীক্ষার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।