রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার আটক চার জেএমবি সদস্যকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে নাশকতার এমন পরিকল্পনার তথ্য পাওয়ার কথা বলেছেন র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
তাদের ধারণা, ওই চার জঙ্গির মতো আরও অনেক প্রশিক্ষিত জেএমবি সদস্য নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ‘ছদ্মনামে’ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিস্ফোরক মজুদ করছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও র্যাব সদর দপ্তর সংলগ্ন রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকার পূর্ব মোল্লারটেকে প্রেমবাগান এলাকার একটি বাসা থেকে সেদিন ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন- জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর এবং এহসার সদস্য আবদুর রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন (৩৫), নওগাঁর আমীর এবং গায়রে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম (৩২), জেএমবির দিনাজপুর জেলার আমীর ও এহসার সদস্য মো. কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হানজালা (৫৫) ও গায়রে এহসার এবং রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক মো. মোফাজ্জল হোসেন (২২)।
বাসাটি থেকে একটি গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, আনুমানিক ৩০ মিটার করডেক্স, আড়াই কেজি স্প্লিন্টার, ৫০০ গ্রাম গান পাউডার, এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, ছয়টি বড় ও ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রোল বোমা, আনুমানিক দুই কেজি মারবেল, ৫০০ গ্রাম সালফিউরিক এসিড, একটি ডেটোনেটর বক্স, এক বান্ডেল তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের ম্যানুয়াল ও বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই পাওয়া যায় বলে র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম জানান।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছদ্মনামে বাসা ভাড়া করে কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছে জঙ্গিরা।
বাসার মালিক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রউফের স্ত্রী হুসনে আরা বেগমও ওইদিন জানিয়েছিলেন, আবদুর রাজ্জাক ‘মামুন’ নামে মাসিক সাত হাজার টাকায় নিজেকে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল তার স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা। এপ্রিলে কুমিল্লা থেকে তাকে ঢাকায় আনা হবে। তবে দিনের বেলায় উনি (মামুন) বাসায় থাকতেন না। কখনো কখনো গভীর রাতে ফিরতেন।”
বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় কেন ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অন্য কোনো নথির কপি রাখা হয়নি এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি হুসনে আরা।
জিজ্ঞাসাবাদে চার জঙ্গিই রাজধানীতে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনার কিছু তথ্য দিয়েছে বলে জানান দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক আখতার হোসেন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে হওয়া মামলাটি তিনিই তদন্ত করছেন।
আখতার হোসেন বলেন, “তাদের শহরজুড়ে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য তারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। কখনো ভাড়া করা বাসায়, কিংবা দরকার হলে ঢাকার বাইরে থেকে বিস্ফোরক তৈরির উপাদান সংগ্রহ করে তারা নিজেরাই বোমা বানাত।”
শনিবার আদালত চার জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের কতজন এখন ঢাকায় আছে, কীভাবে তারা অর্থ সংগ্রহ করছে, নাশকতার পাশাপাশি অন্য কোনো ধরনের পরিকল্পনা আছে কীনা- সেসব তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদে।”
র্যাবের হাতেও রাজধানীতে জেএমবির নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেএমবির বেশ কয়েকজন এহসার ও গায়রে এহসার সদস্য এরই মধ্যে নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক নিয়ে রাজধানীতে অবস্থান করছে এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে।”
এই জঙ্গিদের ধরতে র্যাব কাজ করছে বলে মুফতি মাহমুদ খান জানান।