লাঙ্গলবন্দে প্রাণহানি: তীর্থস্থান সংরক্ষণের আহবান

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ১০ পুণ্যার্থীর মৃত্যুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তীর্থস্থানটি সংরক্ষণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2015, 12:54 PM
Updated : 30 March 2015, 12:54 PM

সোমবার সকালে পরিদর্শন শেষে তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

পরে তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গেও সাক্ষাত করেন।

প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন লেখক সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কৃষিবিদ অধ্যাপক নুর মোহম্মদ তালুকদার, হাসান আহমেদ, সুবোধ এম বাস্কে, নারী নেত্রী জয়ন্তী রায় ও শায়লা আহমেদ লোপা।

প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পুণ্যস্নানে এসে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ১০ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তা সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে বলে আশা করেন তিনি।

এছাড়া আগামীতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রনয়ণেরও আহ্বান জানান তদন্ত কমিটির প্রতি।

তিনি বলেন, লাঙ্গলবন্দে প্রতিবছর পুণ্যস্নান করতে ১০-১৫ লাখ মানুষ আসেন। দেশ-বিদেশের এসব পুণ্যার্থীর জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি, শৌচাগার, কাপড় বদলানোর স্থান ও বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই।

লাঙ্গলবন্দের দেবোত্তর সম্পত্তিগুলি প্রভাশালীরা জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। নদীর ভরাট হয়ে পানি কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে থাকে, যা পুণ্যার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ বলে অভিযোগ করেন মকসুদ।

তিনি বলেন, লাঙ্গলবন্দের স্নানঘাটের পার্শ্ববর্তী রাস্তা সরু হওয়ায় পুন্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এজন্য পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা কীভাবে আরও বাড়ানো যায় এবং স্নানোৎসবে আয়োজক জেলা-পুলিশ প্রশাসন, স্নান উদযাপন কমিটির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তা আগে থেকে ঠিক করা উচিত।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পুরো উপমহাদেশের মধ্যে লাঙ্গলবন্দ বড় তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মহাত্মা গান্ধীর দেহভষ্ম হিমালয়, ত্রিবেণীসঙ্গম ও লাঙ্গলবন্দে ছড়ানো হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছিলেন।

অষ্টমী স্নানের দিন কারা বেইলি ব্রিজ ভাঙার গুজব ছড়িয়েছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

৪৭ একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হতে হতে এখন মাত্র সোয়া দুই একর রয়েছে। কারা এই সমস্ত দেবোত্তর সম্পত্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে বেদখল করেছে তাদেরও চিহ্নিত করে ওই সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের দাবি জানান তিনি।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য আরও বলেন, লাঙ্গলবন্দ এখন শুধু মাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান নয়, এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তা সংরক্ষণ করতে হবে।

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শংকর কুমার সাহা প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে দেখা করেছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলটি নগর ভবনে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে।

গত ২৭ মার্চ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান চলাকালে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ৭ জন নারীসহ ১০  পুণ্যার্থী নিহত হন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।