ভোটে এলেও মামলা নিয়ে শঙ্কিত চট্টগ্রামের ৮ কাউন্সিলর

নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের মাঠে নামা নিয়ে শঙ্কায় আছেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আটজন কাউন্সিলর।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2015, 10:20 AM
Updated : 30 March 2015, 10:20 AM

আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যে কয়েকজন শঙ্কার কথা জানালেও প্রয়োজনে কারাগারে থেকে ভোটের থাকার কথা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আইন অনুযায়ী কাজ করবে তারা।

এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার কী করে, তা দেখার অপেক্ষোয় রয়েছি।”

আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটে অংশ নিতে রোববার শেষদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৪টি নারী কাউন্সিলর পদে মোট ৩৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন নাশকতার মামলার আসামি আটজন কাউন্সিলর।

এদের মধ্যে বিএনপিতে যুক্তরা হলেন- ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মাহবুবুল আলম, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীর আব্দুস সাত্তার সেলিম, ৩১ নম্বর আলকরণের দিদারুর রহমান লাভু, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটার ইসমাইল বালি, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরের হাসান মুরাদ, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহরের সরফরাজ কাদের রাসেল।

এছাড়া ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থক কাউন্সিলর শামশুজ্জামান হেলালী ও ১৩ নম্বর পাহাড়তলীর মাহফুজুল আলমও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গত ৫ জানুয়ারির পর অবরোধ শুরুর পর থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার মামলায় আসামি হয়েছেন তারা।

এদের মধ্যে চান্দগাঁও এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল থেকে কারাগারে আছেন মাহবুবুল আলম।

গ্রেপ্তার এড়াতে তারা সবাই মনোয়নপত্রও সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন পরিবারের সদস্য, আইনজীবী কিংবা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশন ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়ন বাছাই শেষে ৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। ৯ এপ্রিলই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এরপরই প্রার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন প্রচারে। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী আমেজে থাকলেও প্রচারে নেমে গ্রেপ্তারের শঙ্কায় আছেন আটজন কাউন্সিলর প্রার্থী।

আত্মগোপনে থাকা ৩৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল বালি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১৩ মার্চ আমি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ১৬ মার্চ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।

“সমর্থকরা রোববার আমার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আমি উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করব। জামিন পেলেই প্রচারণা শুরু করব।”

প্রয়োজনে কারাগারে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন এই কাউন্সিলর।  

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সেলিম মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন।  

তিনিও আগামী ২ এপ্রিল উচ্চ আদালত খুললে জামিনের আবেদন করবেন জানিয়েছেন। তবে জামিন না পেলে নির্বাচনী প্রচারে তাদের সমস্যা হবে বলে মনে করেন তিনি।

আসামি প্রার্থীদের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, “আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কমিশন যা বলবে আমরা তা মানব।

“তবে যারা ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হাঁটাচলার অধিকারও হারিয়ে ফেলেন। যে কোনো সময় চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়।”

গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, আদালত থেকে জামিন না পেলে আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ভোটে প্রার্থী হলেও তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    

এসব প্রার্থীদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, “ঢাকার নির্বাচন কমিশন থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব আমরা।”

২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডের ১৯টিতে বিএনপি এবং দুইটিতে জামায়াত সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচিত হন।