নির্বাচনে নেই মান্না, তার চিকিৎসা চায় পরিবার

কারাবন্দি মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র তোলা হলেও তা জমা দেওয়া হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 12:31 PM
Updated : 29 March 2015, 02:15 PM

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন দুপুরে গুলশানে মান্নার বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ককে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান তার স্ত্রী মেহের নিগার।

দিনশেষে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের যে তালিকা পাওয়া গেছে তাতে মান্নার নাম নেই, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বলেন, “আমাদের কাছে নির্বাচন বা অন্য কিছুর চাইতে তার জীবনরক্ষা করা বেশি জরুরি। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কারাগার থেকে হাসপাতালে প্রেরণের অনুরোধ করছি। চিকিৎসার স্বার্থে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ করছি।”

১০ দিন আগেও রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একই দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।

একটি টেলিফোন কথোপকথনের ভিত্তিতে করা সেনা বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার মামলায় এক মাস আগে গ্রেপ্তার হন মান্না। পরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। দুই মামলায় দুই দফায় ২০ দিন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি।

মেহের নিগার বলেন, “রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বারবার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা আমরা লক্ষ্য করছি। স্বামীর জীবন নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত আমি।”

মান্না দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, “তার হার্টে চারটি ব্লক আছে। এছাড়া ঘাড়ের হাড় ক্ষয়ে গেছে বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর সেখানে সব পরীক্ষা না করে তাকে তড়িঘড়ি করে কারাগারে পাঠানো হয়।”

চিকিৎসকরা দ্বিতীয়বার এনজিওগ্রাম এবং হাড় ক্ষয় নিয়ে এমআরআই করতে বললেও সেগুলো করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মান্নার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এবং অন্য এক ব্যক্তির টেলিআলাপের দুটি অডিও ক্লিপ ফেব্রুয়ারির শেষদিকে প্রকাশ হলে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনে ঢাকার সাবেক মেয়র খোকার সঙ্গে আলাপচারিতায় সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা নিয়ে মান্নাকে কথা বলতে শোনা যায়। অন্যটিতে চলমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাকে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়।

এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি মান্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সেনা বিদ্রোহে উসকানির মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলা হয়। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ মার্চ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্না জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর দল থেকে বাদ পড়েন।

পরে নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলেন ডাকসুর দুই বারের নির্বাচিত ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না।  নাগরিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিচয় পেতে থাকে নাগরিক ঐক্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি অবরোধের ডাক দেওয়ার পর নাশকতায় ব্যাপক প্রাণহানি শুরু হলে সংকট সমাধানে সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে আসেন নাগরিক সমাজের একাংশ। ওই উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মান্না।