মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হচ্ছে রোববার

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিতে রোববারই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে আগ্রহীদের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 03:19 PM
Updated : 29 March 2015, 03:56 AM

এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করবেন। ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষের পর চূড়ান্ত হবে প্রার্থী তালিকা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৮ মার্চ তফসিল ঘোষণার পর গত ১০ দিনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের তিনটি পদে ৩ হাজার ৪৯টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।

তবে এর মধ্যে ২৩৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে অধিকাংশকে শেষ দিন রোববার বিকাল ৫টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রার্থী স্বয়ং বা তার পক্ষে প্রস্তাবক, সমর্থক উপস্থিত হয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে লিখিত প্রত্যায়ন করা সংশ্লিষ্ট কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।

ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউট (এনআইএলজি) ও উত্তরের কার্যালয় গুলিস্থানে মহানগর নাট্যমঞ্চ।

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থক-তিন জনের যে কোনো একজন উপস্থিত হয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।”

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, “মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কোনোভাবেই ৫ জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না।”

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদ ছাড়া ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ রয়েছে। দক্ষিণে মেয়র পদ, ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ রয়েছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, উত্তরে মেয়র পদে ২৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ ৭৪ ও সংরক্ষিত ৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দক্ষিণে মেয়র পদে ৩০ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে এক হাজার ১২৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২০৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ ৭৭ ও সংরক্ষিত ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মেয়র পদে উত্তরে আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী, সামছুল আলম চৌধুরী এবং দক্ষিণে আখতারুজ্জামান আয়াতুল্লাহ, আব্দুল খালেক, আবু নাসের মোহাম্মদ ও জায়েদুর রহমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ‘শনির প্রভাব’

চট্টগ্রামে ৬৭১ জন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র নিলেও জমা দিয়েছেন ৫৫ জন।

চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, শনিবার অনেকের মনোনয়নপত্র জমা হবে বলে তারা ধারণা করলেও তা হয়নি।

“আমাদের ধারণা ছিল আজ (শনিবার) অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। সেরকম প্রস্তুতিও ছিল। ওয়ার্ডভিত্তিক আলাদা আলাদা কর্মকর্তাকে মনোনয়নপত্র জমা ও বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সকাল থেকেই। কিন্তু পুরো দিনে মাত্র ৩০ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।”

“বেলা বাড়ার সাথে সাথে মনোনয়নপত্র জমা না পরায় আমরা খোঁজ নিলাম। জানতে পারলাম শনিবার জমা দিলে অমঙ্গল হতে পারে এমন সংস্কারের কারণে প্রার্থীরা আসেননি।”

চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সোলায়মান আলম শেঠসহ অধিকাংশ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী রোববার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

শনিবার দশম দিনে মেয়র পদে মোহাম্মদ ইলিয়াস, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি ও আবুল কালম আজাদ মনোনয়নপত্র নেন। এছাড়া ৩৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সাত জন সংরিক্ষত নারী কাউন্সিলর পদের মনোনয়নপত্র নেন।

শনিবার মেয়র পদে একজন, কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে মাত্র দুজন মনোনয়ন জমা দেন।

মেয়র পদে ১৮ জন, কাউন্সিলর পদে ৫৫৯ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন চট্টগ্রামে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

সবার সহযোগিতা চান রিটার্নিং কর্মকর্তারা

মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে ভোট পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালনে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির বিষয়ে ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সিপিবির আব্দুল আল কাফি রতন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।

ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “আমি সবার সহযোগিতা চাই। আচরণবিধি মেনে চলুন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।”

ইতোমধ্যে অন্তত ৩০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

‘লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড’ রাখতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম প্রচারণা করার অনুরোধ জানান দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, অনেক প্রার্থী আগাম প্রচার চালাচ্ছেন, যেগুলো সিটির করপোরেশন আচরণ বিধি লঙ্ঘন। আগাম প্রচার করলে নির্বাচনে লেভেল প্লেংয়িং ফিল্ড বজায় থাকে না। লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড বজায় রাখতে দয়া করে আপনারা আগাম প্রচারণ চালাবেন না।”

তিনি জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন।