স্বাধীনতা দিবসের ক্রোড়পত্রে ‘অন্যের অনুবাদ নিজের নামে’

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্রে অন্যের করা একটি কবিতার অনুবাদ নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2015, 04:35 PM
Updated : 27 March 2015, 11:41 AM

‘আত্মপরিচয়’ নামে এই কবিতার মূল লেখক নাসির আহমেদ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলা পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে মূল কবিতাটি রয়েছে। 

আর ‘সেলফ আইডেন্টিটি’ শিরোনামে ওই কবিতার অনুবাদ ছাপা হয়েছে ইংরেজি দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে। সেখানে অনুবাদক হিসাবে দেওয়া হয়েছে জাহিদুল ইসলামের নাম, যিনি বিটিভির একজন নির্বাহী প্রযোজক। 

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমন ফাহিম শাহেদের অভিযোগ, কবিতাটির ভাষান্তর তাকে দিয়ে করিয়ে জাহিদুল ইসলাম তা নিজের নামে ছাপিয়ে দিয়েছেন।

ওই কবিতা অনুবাদের বিষয়ে তাদের দুজনের মধ্যে যে মেইল চালাচালি হয়েছে, তার অনুলিপিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে জাহিদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসের নম্বারে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত অনুবাদের একটি ছবি বৃহস্পতিবার ভোররাতে ফেইসবুকে শেয়ার করে ইমন ফাহিম শাহেদ লিখেছেন, “একটি করুণ, অবিশ্বাস্য বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যভিচার সংঘটিত হয়েছে। আমি অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেব, তবে তার আগে সবার দেখা ও বোঝার জন্য বিষয়টি ফেইসবুকের মাধ্যমে জানাতে চাই।”

তিনি জানান, মূল কবিতাটি যার লেখা, সেই নাসির আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের পরিচালক।

“আমাকে এটা ইংরেজিতে অনুবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিটিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে আমাকে মেইল করে কবিতাটি অনুবাদ করে দিতে ‘অনুরোধ’ করেন, যেখানে আমার নাম ‘যথাযথভাবে প্রকাশিত হবে’ এবং আমাকে ‘সম্মানী’ দেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“তিনি লেখেন, গুরুত্বপূর্ণ এই কবিতাটি অনুবাদের জন্য আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরদিন সকালের মধ্যে অনুবাদটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছাতে হবে বলে কবিতা অনুবাদের কঠিন কাজটি করতে তিনি আমাকে ন্যূনতম সময় দেন।”

শাহেদ ফেইসবুকে লিখেছেন, পরীক্ষার খাতা দেখা ও ঘুম বাদ দিয়ে তিনি অনুবাদের কাজটি করেন। পরদিন সকালে ক্লাসের বিরতিতে সেই অনুবাদ তিনি পরিমার্জন করেন।

“এর মধ্যে জাহিদুল ইসলাম আমাকে বার বার ফোন করতে থাকেন যাতে আমি কাজটি শেষ করি এবং অনুবাদটি তাকে ইমেইল করি। তিনি জানান, অনুমোদনের জন্য তাকে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। আমার নাম অনুবাদক হিসাবে ঠিকভাবে লেখা হয়েছে কি-না, সে বিষয়েও তিনি নিশ্চিত হয়ে নেন।”

ভোর রাতে অনলাইনে ক্রোড়পত্র পড়ে ফেইসবুকে শাহেদ লিখেছেন, “আমি যেভাবে অনুবাদ করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেভাবেই সব ইংরেজি দৈনিকে ‘সেল্ফ আইডেন্টিটি’ শিরোনামে কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে। আমি আর আমার পরিবারের সদস্যরা আগ্রহ নিয়ে অনলাইনে পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, কবিতার শেষে অনুবাদকের জায়গায় কেবল ছাপা হয়েছে জাহিদুল ইসলামের নাম।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক প্রশ্ন রেখেছেন- “আপনারাই আমাকে বলুন, আমি কি করতে পারি?”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাসির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি অনুবাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জাহিদুল ইসলামকে। অন্যের মাধ্যমে অনুবাদ করিয়ে আনার বিষয়টি তিনি জানতেন না।

“সকালে শাহেদের মা হোসনে আরা শাহেদ আমাকে বলার পর বিষয়টি প্রথম জানতে পারি। এটা দুঃখজনক।”

এক প্রশ্নের জবাবে নাসির আহমেদ বলেন, জাহিদের সঙ্গে এ বিষয়ে তার কথা হয়নি। তবে দেখা হলে তিনি অবশ্যই কথা বলবেন।