বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর মেহেদীবাগে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় চট্টগ্রাম বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক বৈঠক শেষে এ সমর্থনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আমীর খসরু বলেন, “চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পক্ষে মনজুর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা নগর, উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা বসেছি। সবাই একমত হয়েছি, আমরা তাকে মেয়র নির্বাচিত করতে চাই।”
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান মেয়র মনজুরকে আসন্ন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, যে ফোরাম থেকে আগেরবারও নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
আমীর খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে সমর্থন দিলাম। কেন্দ্রীয় বিএনপির ঘোষণা এখনো আসেনি।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা এস এম ফজলুল হক, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি সামশুল আলম ও আবু সুফিয়ান প্রায় তিন ঘণ্টার এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নগর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ডের বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সভা চলাকালে সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় ছিলেন।
সভা শেষে আমীর খসরু উপস্থিত নেতাকর্মীদের বলেন, “আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি। শুধু মনজুর আলমকে জয়ী করা নয়, এ নির্বাচনে নির্ধারিত হবে আমরা আন্দোলনে জয়ী হব না পরাজিত হব।
“এটা সাধারণ নির্বাচন নয়। আন্দোলনে জিততে চাইলে নির্বাচনে জিততে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ের ফল নিয়ে ফিরব।”
মনজুর আলমের পক্ষে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে আমীর খসরু এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমান দায়িত্ব পালন করবেন বলেও এ সময় জানানো হয়।
নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় মনজুর আলমের ব্যবসায়ীক কার্যালয়কে নির্বাচনী কার্যালয় এবং আমীর খসরুর বাসভবনকে নির্বাচনী সমন্বয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
১৯৯৪ সাল থেকে পরপর তিনবার নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর নির্বাচিত মহন মনজুর। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরের বছর সিসিসি নির্বাচনে নিজের রাজনৈতিক ‘গুরু’ মহিউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মনজুর মাঠে নামেন এবং ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন।
সে সময়ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন মনজুরকে প্রার্থী ঘোষণার এক দিন পর বিএনপি তাকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছিল।
বেলা সোয়া একটায় আমীর খসরুর বাড়িতে বৈঠক শুরুর আগে সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি নেতারা।
আবদুল্লাহ আল নোমান সে সময় বলেন, “তিন সিটির নির্বাচন অর্থবহ হবে বলে মনে হয় না। তবে আমরা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।”
নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ’ হলে এবং জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারলে আগেরবারের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে মনজুর আলম জয়ী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নোমান বলেন, “এটা শুধু চট্টগ্রামের ভোট নয়। মনজুরের জয়ের মধ্য দিয়ে সারাদেশে আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন সৃষ্টি হবে।”
আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ভোটে অংশ নিতে চান উল্লেখ করে নোমান বলেন, “সিটি নির্বাচনে সরকারের আচরণে একটা অভিজ্ঞতা হবে। ফলে আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল কী হবে নির্বাচনের পর তা নির্ধারণ করা যাবে।”
মনজুর আলম বলেন, “গতবার দলীয় চেয়ারপারসন পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। আশা করি সেভাবেই সমর্থন দেবেন। মনোনয়নপত্র এখনো সংগ্রহ করিনি। পদত্যাগও করতে হবে। এসব বিষয়ে কাল-পরশু জানাব।”
এবারের মেয়র নির্বাচনে মনজুরের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং নগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামও আলোচনায় ছিল।
তবে তাদের ‘অনীহার কথা’ কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়ার পর মনজুর আলমকেই বিএনপির পক্ষ থেকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিএনপি নেতারা জানান।