চার নেতার এক পলাতক খুনির মৃত্যু কানাডায়

কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) কিসমত হাসেম কানাডায় মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2015, 09:53 AM
Updated : 26 March 2015, 10:50 AM

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় কানাডার মন্ট্রিলে তিনি মারা যান বলে তার ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত হাসেম শকু জানিয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও আসামি ছিলেন কিসমত। তবে রায়ে তিনি খালাস পান।

পঁচাত্তরের শেষ দিকে জেল হত্যাকাণ্ডের পর দেশ ছেড়ে যাওয়া কিসমতের বিদেশে মৃত্যু হয়েছে এমন এক দিনে যখন স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকী উদযাপন করছে বাঙালি জাতি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু জানান, কানাডার মন্ট্রিলে নিজের বাসায় হৃদরোগে মারা যান তার ভাই।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাযা শেষে তাকে মন্ট্রিলে দাফন করা হবে।

কিসমতের স্ত্রীর নাম পারভীন হাসেম। কোনো ছেলে-মেয়ে নেই তাদের।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনীর একাংশ।

এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ক্ষমতা দখল নিয়ে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে ওই বছর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়।

২০০৪ সালের অক্টোবরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ হত্যায় তিন সেনা কর্মকর্তা  রিসালদার (অব.) মুসলেমউদ্দিন, দফাদার (বহিষ্কৃত) মারফরত আলী শাহ ও দফাদার (বহিষ্কৃত) আব্দুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া ক্যাপ্টেন  কিসমত হাসেমসহ ১২ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। তাদের তিনজনকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।

পরে হাই কোর্ট হয়ে মামলাটি আপিল বিভাগে এলে চূড়ান্ত রায়েও কিসমত হাসেমের দণ্ড বহাল থাকে।

পাঁচত্তরের ৩ নভেম্বর চার নেতাকে হত্যার পর  পরই দেশ ত্যাগ করেন  কিসমত হাসেম। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে গোপনে কয়েকবার দেশে আসা- যাওয়া করেন তিনি।

তবে নব্বইয়ে সামরিক শাসনের অবসানের পর কিসমতকে আর দেশে দেখা যায়নি। তার পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের ডনচেম্বার এলাকায়।

কিসমতকে গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছিল। কানাডা থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও।