দুই যুগের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযান নামে গণহত্যা চালানো হয়। বাঙালিরা এর বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রতিরোধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর রাতেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর মধ্যেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি।
অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।
বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। সাধারণ এই ছুটির দিনে সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানে পালন করবে গৌরবের দিনটি।
প্রতি বছরের মতো এবারো শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। শ্রদ্ধায় সবাই স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের।
ঢাকায় ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনার পর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেবেন।
স্বাধীনতা দিবসে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রকামী, শান্তিকামী। তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ কোনো ধরনের সহিংসতা সমর্থন করে না।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী যে কোনো অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার, পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে।
‘বাংলার জন্য চার লাখ’
এদিকে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করতে স্বাধীনতা দিবসে নতুন চার লাখ শব্দ গুগল ট্রান্সলেটে যোগ করার লক্ষ্য নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
আর এই র্কমসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার জন্য চার লাখ’।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ৫০টির বেশি স্থানে স্বেচ্ছাসেবকরা গুগল অনুবাদে বাংলা শব্দ সংযোজন করবেন। আর দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার জন্য কাজ করবেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
দিনের অন্যান্য কর্মসূচি
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার/টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী-২০১৫ পরিদর্শন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
গৌরবের এ দিনে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা সজ্জিত করা হবে আলোকসজ্জায়।
এছাড়া ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সাজানো হবে। দেশের সব শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থাকবে উন্মুক্ত।
সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।