২৫ মার্চ শহীদদের স্মরণে বুধবার রাতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ-৭১, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা কর্মসূচির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্তরা এই দাবি তুলেছেন।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৫ মার্চের ওই রাতে ঢাকা শহরে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বাধিক হত্যাকাণ্ড।
“পৃথিবীর আর কোনো দেশে যাতে এ ধরনের নৃশংসতা না হয়, সেজন্য আমরা এর বিচার চাচ্ছি এবং এই রাতটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা (জেনোসাইড) দিবস হিসেবে স্বীকৃতি চাচ্ছি।”
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ভোটে জিতলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিল না পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। এর মধ্যেই ৭ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
মার্চ মাসজুড়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণের পর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা। শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’, বন্দি করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বন্দি হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যার পথ ধরে নয় মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, বিশ্বমানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোসহ এধরনের আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি চাওয়ার দাবি জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
স্বীকৃতি না থাকার কারণে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ওই গণহত্যা নিয়ে ভুল বার্তা যাচ্ছে দাবি করে শাহরিয়ার কবির বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের অনেক দেশে বাংলাদেশের ওই ঘটনাকে ফরগটেন জেনোসাইড হিসেবে বলা হচ্ছে। অনেকে একে সিভিল ওয়ারও বলছে।”
বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জেনোসাইড বা গণহত্যা সংগঠিত হলেও ৪৪ বছর আগে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যাললয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
“তারা ভেবেছিল- যদি হত্যা করে গণতন্ত্রকামীদের কমিয়ে দেওয়া যায়, তবে ভোটের মাধ্যমে তাদের মনের যে ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছিল তা দমন করা যাবে।”
কালরাত স্মরণে বুধবার রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৪টি মশাল প্রজ্জ্বলন ও আলোর মিছিল করে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। মুক্তিযুদ্ধের সময়নায়ক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা এতে অংশ নেন। এছাড়া মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।