জব্বারের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া পলাতক যুদ্ধাপরাধী আবদুল জব্বারের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2015, 01:26 PM
Updated : 25 March 2015, 04:02 PM

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইকরামুল হক টুটুল জানান, বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৩৭৮ পৃষ্ঠার নথিসহ এই আপিল দায়ের করা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার রাজাকার নেতা জব্বারকে সাব্যস্ত করেছে। এ অবস্থায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা না দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। আমরা বলছি, এটা আইন সম্মত হয়নি। বয়স বিবেচনায় সাজা কমানোর কোনো বিধান আইনে নেই।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জব্বারের মামলায় রায় দেয়। চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটিতে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ তিনি করেছেন তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য হলেও বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে।

আনুমানিক ৮০ বছর বয়সী জব্বার রায়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন বলে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়। পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করতে পারছেন না।

এর আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের ইসলামীর ‘গুরু’ গোলাম আযমকেও বয়স বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যিনি রায় ঘোষণার এক বছরের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পেশায় প্রকৌশলী আব্দুল জব্বার ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে’ চেয়ারম্যান- মেম্বারদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সংগ্রাম যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত, তখনও মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসাবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জব্বার সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে তাকে পরিচিত করিয়ে দেয় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার রাজাকারদের ‘রিং লিডার’ হিসাবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জব্বার আত্মগোপনে চলে যান। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা জিয়াউর রহমানের আমলে আবার রাজনীতি করার সুযোগ পেলে জব্বারও সক্রিয় হন।

১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন সেনা শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে; পিরোজপুর-৪ আসন থেকে হন সাংসদ। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। মামলা এড়াতে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও ২০০১ জাতীয় পার্টিতে ফেরেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানও হন।

২০১৩ সালের ১৯ মে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শেষে গতবছর ২৯ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৪ সালের ১১ মে ট্রাইব্যুনালে ৭৯ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন এ মামলার প্রসিকিউটর মোহাম্মদ জাহিদ ইমাম। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১২ মে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জব্বারকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় নিয়ম অনুযায়ী তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতেও তিনি হাজির না হওয়ায় গতবছরের ৮ জুলাই তাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

বিচার চালাতে রাষ্ট্রীয় খরচে জব্বারের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় মোহাম্মদ আবুল হাসানকে। যুদ্ধাপরাধের পাঁচ ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ অগাস্ট আব্দুল জব্বারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন সাক্ষ্য দেন। তবে জব্বার পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।