হরতালের অস্বস্তি কেটে যানজটের দুর্ভোগ

প্রায় দুই মাস পর হরতাল থেকে মুক্তি মিললেও রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে ফিরে এসেছে যানজটের দুর্ভোগ। কয়েকদিন ধরে রাজপথে বাড়তে থাকা যানবাহনের চাপ বুধবার তীব্র আকার ধারণ করে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2015, 07:45 AM
Updated : 25 March 2015, 08:15 AM

সকাল থেকেই গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেইট, বিজয় সরণী, মহাখালী, মগবাজার ও সদরঘাট এলাকায় যানবাহনের ভিড় দেখা দেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সড়ক যানজটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ এবং ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সপ্তাহের ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই হরতাল করে আসছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এরমধ্যে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর বিজয় মিছিলের জন্য একদিন হরতাল ১২ ঘণ্টা শিথিল করা হলেও অবরোধ চালিয়ে যায় আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা দলটি। 

প্রায় তিনমাস ধরে চলা এসব কর্মসূচিতে যানবাহন লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতার কারণে শুরুর দিকে জনমনে আতঙ্ক ও চলাচলে অস্বস্তি কাজ করলেও মাসখানেক আগে থেকে পরিস্থিত পাল্টাতে থাকে।

জনজীবনে হরতালের তেমন কোনো প্রভাব না থাকায় রাস্তায় যান চলাচল বাড়তে শুরু করে এবং প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরকেও একদিন কিছু সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়।  

এতোদিন অজ্ঞাত স্থান থেকে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে রোববার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত হরতাল ডেকে পরে তা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানোর বার্তা দেওয়া হচ্ছিল। তবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে মঙ্গলবার বিএনপির বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলুর নামে যে বিবৃতি পাঠানো হয় তাতে হরতাল এড়িয়ে অবরোধ ও মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন পর হরতালমুক্ত একটি কর্মদিবস পেয়ে বুধবার সকাল থেকে অস্বস্তি ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়ে আসে রাজধানীবাসী। সকাল সোয়া ৮টার দিকে শাহবাগ থেকে বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রুবেলের মহাখালী পৌঁছাতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।

রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোনারগাঁও মোড়, বাংলামটর, পান্থপথ, ফার্মগেইটসহ প্রায় সবকটি চৌরাস্তায় গাড়ির জট। পুরো রাস্তাই গাড়ি চলছে খুব ধীর গতিতে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সকাল ৯টায় মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে যাত্রা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। পথে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বিজয় সরণী, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও গুলিস্তান এলাকায় তীব্র যানজটের মুখে পড়েছে তার গাড়ি।

গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এবং সদরঘাট থেকে গুলিস্তানমুখী সড়ক, নয়া বাজার, রায় সাহেব বাজারের সড়কগুলোতেও সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন জানান।

গুলিস্তান ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট মশিউর রহমান বলেন, “অন্য দিনের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির চাপ একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে।”

টঙ্গীর আব্দুল্লাপুর থেকে সদরঘাটের পথে চলাচলকারী আজমেরী পরিবহনের চালক সেন্টু মিয়া জানান, হরতালের মধ্যেও তিনি গাড়ি চালিয়েছেন। তবে বুধবার গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি।

পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ হরতাল নেই, এ কথাটা ভাবতে ভালো লাগছে। দীর্ঘদিন ধরে অলিগলিতে হাতবোমা বিস্ফোরণ, যানবাহনে আগুন ও অন্যান্য নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে মানুষ চলাফেরা করেছে। এখন সেই আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় সবাই নির্বিঘ্নে রাস্তায় বেরিয়েছে।”

অবশ্য আশরাফুল্লাহ আনসারি নামে পুরান ঢাকার অরেক ব্যবসায়ী বলেছেন, এতোদিন হরতাল থাকার বিষয়টি তিনি আমলেই নেননি। নিজের মতো করিই স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্টা করে গেছেন।

হরতাল না থাকলেও বিএনপি জোটের অবরোধ এখনো আছে। তাই পুলিশ অন্যান্য দিনের মতোই সতর্ক রয়েছে বলে জানালেন বংশাল থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির।