ঘরের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী-গৃহকর্মীর রক্তাক্ত লাশ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও গৃহকর্মীর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2015, 02:43 PM
Updated : 25 March 2015, 07:05 AM

প্রয়াত ওই পুলিশ কর্মকর্তার ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী ও কিশোরী গৃহকর্মীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত রওশন আরার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কুদ্দুস ১৯৯৬ সালে মারা যান। তাদের দুই মেয়ে ও তিন ছেলের সবাই বিদেশে থাকেন।

৫৬ নম্বর উত্তর যাত্রাবাড়ীতে কলাপট্টির কাছে মহাসড়ক থেকে ৫০ গজের মধ্যে নির্মিত তিনতলা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় গৃহকর্মীদের নিয়ে থাকতেন রওশন আরা।

রওশন আরার সঙ্গে গৃহকর্মী কল্পনাকেও (১২) হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। কল্পনার মা লাকি আক্তার ওই সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

লাকির বক্তব্য অনুযায়ী, সন্ধ্যার পর তিনি বাইরে থেকে ফিরে ঘরের মধ্যে তার মেয়ে ও গৃহকর্ত্রী রওশন আরার লাশ দেখেন। তার চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসার পর পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

নিঃসঙ্গ রওশন আরার কোনো শত্রু থাকার কথা স্বজন, প্রতিবেশী ও ভাড়াটিয়াদের কেউ জানাতে পারেননি। প্রয়াত সহকর্মীর স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান।

ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ঘরের একটি কক্ষে বিছানার ওপর রওশন আরার লাশ পড়ে ছিল। কল্পনার লাশটি ছিল আরেকটি কক্ষের সোফার ওপর। দুজনকে জবাই করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানা গেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কয়েকটি সংস্থা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। লাকিকেও আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

সীমানা প্রাচীরের মধ্যে কিছু ফাঁকা জায়গা রেখে রওশন আরার তিন তলা বাড়ি। বাড়ির দুই দিকে বহুতল ভবন। পশ্চিম দিকে একটি সরু গলির বিপরীত পাশে রয়েছে আরেক পুলিশ কর্মকর্তার দোতলা বাড়ি।

রওশন আরার বাড়ির নিচ তলায় দুই ভাড়াটিয়া রয়েছে, যাদের একজনের মুদি দোকান রয়েছে। তিন তলায় কোনো ভাড়াটিয়া ছিল না গত এক মাস ধরে।

সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে বাড়িতে ঢোকা গেলেও ভবনে ওঠার পথে রয়েছে কলাপ্সিবল গেইট, যা সব সময়ই তালাবদ্ধ থাকে বলে নিচতলার ভাড়াটিয়া মো. মোস্তফা জানিয়েছেন।

রওশন আরা (পারিবারিক অ্যালবামে পাওয়া ছবি)

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রওশন আরা নির্বিরোধী মানুষ ছিলেন। ডায়াবেটিস আছে বলে তিনি হাঁটাহাঁটি করতেন। তিনি সকালে নিয়মিত যেতেন কাঁচাবাজারে।

ভাড়াটিয়া মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, সকালে কল্পনার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। ডিম কিনতে এসেছিল তার কাছে।   

মুদি দোকানি মোস্তফা বলেন, দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা দেখে তিনি আবার দোকানে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো আঁচ তিনি পাননি।

“কেঁচি গেইটটি সব সময় লাগানো থাকে। কারও বাসায় কেউ এলে সেই বাসায় থাকা চাবি দিয়ে তা খুলতে হয়। ফলে বাইরের কারও ঢোকার সুযোগ নেই।”

আশপাশের বাড়িগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও হত্যাকাণ্ড ঘটার বিষয়টি টের পাননি।

ঘটনাস্থলে পুলিশ

যাত্রাবাড়ী থানার এসআই এমরানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে দুজনের লাশ পাওয়া যায়।

যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান বলেন, কক্ষের জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পেয়েছেন তারা।

ঘটনাটি ডাকাতি না অন্য কিছু, তা পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। বাসা থেকে কিছু খোয়া গেছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তাও বোঝা যায়নি।

আব্দুল কাইয়ুম নামে এক স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বাবার প্রাসাদ’ নামে ওই বাড়িতে গৃহকর্মীদের নিয়েই থাকতেন রওশন আরা। 

তিনি জানান, নিহতের দুই মেয়ে হৃদি ও রুমা, ছেলে আনিস ও আরিফ থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আরেক ছেলে কাজল থাকেন কানাডায়।