ভাষা নিয়ে মন্তব্য, তসলিমার সমালোচনা

বাংলা ভাষাকে ‘অপভ্রংশ’ বলায় নির্বাসিত নারীবাদী লেখকা তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা হয়েছে বাংলাদেশে।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2015, 04:33 PM
Updated : 23 March 2015, 05:33 PM

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানরত তসলিমা সোমবার তার ফেইসবুকে লেখেন: “ঢাকা আর কলকাতার প্রকাশকদের মধ্যে একটা পার্থক্য আমি দেখেছি, তা হলো ঢাকার প্রকাশকরা আমার শুদ্ধ বানান অশুদ্ধ করে ছাপায় আর কলকাতার প্রকাশকরা আমার অশুদ্ধ বানান শুদ্ধ করে ছাপায়।”

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা ভাষা’ এক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তসলিমা তার স্ট্যাটাসে আরও লেখেন: “এতকাল আমি বলেছি, বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ভাষা বাংলা, এক এবং অভিন্ন। ইদানিং মনে হচ্ছে আলাদা, পশ্চিমবঙ্গের ভাষাটা বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষাটা বাংলার অপভ্রংশ, ডায়লেকট।”

বাংলাদেশের বাংলাকে ‘বাংলাভাষা’ বলা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন মৌলবাদীদের হুমকিতে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া এই লেখক।

সম্প্রতি ভারতে রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়া বাংলাদেশি এই লেখক স্ট্যাটাসে এ বিষয়ে লেখেন: “বাংলাদেশের ভাষার নাম বাংলা না বলে বাংলাদেশি বলাই ভালো।”

তসলিমার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা কোন সুস্থ মানুষের কথা হতে পারে না। বাংলা ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে এরকম কথা বলা সম্ভব নয়।”

“মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুই বঙ্গের ভাষাই অপভ্রংশ। মান ভাষা সব সময়ই কাল্পনিক। সুতরাং কোনটি প্রকৃত বাংলা এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। ভাষার প্রকৃতিই হচ্ছে পরিবর্তনশীল।”

সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক বেগম আকতার কামালও।

এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি এটা মানি না। বাংলাদেশের মানুষের ভূগোল, সংস্কৃতি, মানচিত্র থেকে এ ভাষা তৈরি হয়েছে। আর বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদও তো এ অঞ্চলেরই, সে হিসেবে বাংলা ভাষার আদি উৎস তো বাংলাদেশ।”

চিকিৎসক তসলিমা গত শতকের ’৯০ এর দশকে লেখালেখি শুরুর পর আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন এই লেখিকা।

২০০৪ সালে ভারত রেসিডেন্ট পারমিট ভিসা দেয় তসলিমাকে। পরে তা বাতিল করে দিলেও ২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে ফের থাকার অনুমতি দেয় ভারত।