শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাদের টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। থানায় এই অভিযোগ জানালেও পুলিশ তাতে গা করেনি বলেও অভিযোগ তাদের।
নিখোঁজ দুই যুবকের মধ্যে একজনের স্ত্রী রুমানা ইসলাম বলেছেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি’ উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
তবে মতিঝিল থানার ওসি ফরমান আলী জিডির ভাষা লিখে দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করার পাশাপাশি বলেছেন, ওই দুই জনকে তারা আটক করেননি।
নিখোঁজ যুবকরা হলেন রাজু ইসলাম ওরফে ইকবাল (২৬) এবং শাওন (২৫)। আরামবাগের ইয়ারা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার রাজু। শাওনের বিষয়ে স্থানীয় কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের সামনে চা দোকান থেকে ওই দুজনকে গাড়িতে তোলার সময় আল আমিন ও জালাল নামে দুজন সেখানে ছিলেন।
আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, তাদেরও তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নাম জেনে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাজু আর আল আমিন বন্ধু। ফকিরাপুলের কাছে আরামবাগে তাদের বাসা। প্রায় সময় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফুটবল খেলতে যান। শুক্রবার বিকালেও তারা গিয়েছিলেন।
আল আমিন বলেন, ফেরার পথে বাসায় ঢোকার আগে পৌনে ৯টার দিকে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে চা খেয়ে রওনা হওয়ার সময় একই এলাকার শাওন ও জালালের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তারাও একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেন।
“তাদের সঙ্গে খেলা নিয়ে কথা বলার ফাঁকে আবার চা খেতে বসছিলাম আমরা। ওই সময় ৭/৮জন সেখানে আসে। ‘আমরা ডিবির লোক’ বলে তারা আমাদের চারজনকে ধরে ফেলে।”
“এরপর নাম জিজ্ঞাসা করে আমাকে এবং জালালকে ছেড়ে দেয়; রাজু আর শাওনকে টেনে-হিঁচড়ে দৈনিক বাংলার দিকে নিয়ে যায়।”
শাওনের পরিচয় জানতে চাইলে আল আমিন জানান, এই এলাকায়ই থাকতেন তিনি। ঢাকায় তার কেউ নেই। তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাও তার জানা নেই।
রাজুর স্ত্রী রুমানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আল আমিন বাসায় এসেই প্রথম খবরটি জানায়। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে চা দোকানির কাছে শোনেন, তার স্বামী ও শাওনকে একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে গেছে।
এরপরই রুমানা মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের সদর দপ্তরে যান, কিন্তু সেখানে কোনো খবর পাননি তিনি। পরে তিনি মতিঝিল থানায় গেলে নাম-ঠিকানা রেখে যেতে বলা হয় তাকে।
পরদিন ভোরে আবার ডিবি কার্যালয়, পল্টন থানা, রমনা থানা ও শাহবাগ থানায় যান রুমানা। কিন্তু কোনো খবর না পেয়ে ফের যান মতিঝিল থানায়।
রুমানা বলেন, “মতিঝিল থানায় গেলে তারা অভিযোগ না নিয়ে নিজেদের খুঁজে দেখতে বলেন।”
এরপর কারাগারেও খবর নেন রুমানা, কিন্তু স্বামীকে পাননি। রোববার তিনি মতিঝিল থানায় আবার যান এবং সঙ্গে নিয়ে যান প্রত্যক্ষদর্শী আল আমিন ও জালালকে।
“কান্নাকাটি করলে এক কর্মকর্তা আমাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং চা দোকানদারসহ আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর থানায় ফিরে অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের কথা লিখবে কি না, তা নিয়ে থানার কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন।”
“পরে ‘বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি’- এ ধরনের বক্তব্য লিখে আনলে সেখানেই পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমি স্বাক্ষর করি,” বলেন রুমানা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে বিরোধী নেতা-কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম করছে বলে বিএনপির অভিযোগের মধ্যে নিখোঁজ হওয়া রাজু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে তার স্ত্রীর দাবি।
স্বামীর খোঁজ না পেয়ে রুমানা দিশেহারা অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাচ্ছেন। সোমবার আরামবাগ এলাকায় গেলে স্থানীয় অনেকেই এগিয়ে এসে রাজু ও শাওনকে খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান।
রাজু ও শাওনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ওসি ফরমান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের কোথাও পাচ্ছি না। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।”
জিডির বিষয়ে রুমানার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, “উনারা যা লিখে দিয়েছেন, তাই জিডি করা হয়েছে। এখন যদি আবার গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে নিয়ে গেছে বলে লিখে দেন, তাও জিডিতে নেওয়া হবে। মামলা করতে চাইলে তাও নেওয়া হবে।”