শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখাবে সরকার

পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2015, 10:54 AM
Updated : 23 March 2015, 10:54 AM

এজন্য খসড়া পরিপত্র করে মতামত নিতে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। মতামত পর্যালোচনা করে শিগগিরই পরিপত্র জারি করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

খসড়ায় শিক্ষার্থীদের সাঁতার অনুশীলনে যেসব পুকুর ও জলাশয় ব্যবহার করা হবে সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং সাঁতার উপযোগী করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খসড়া মতে, কোনো স্কুল-কলেজে পুকুর না থাকলে পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুকুর ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব পুকুর সংস্কার করবে। এনিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমাধান করবেন।

ইউনিসেফের এক জরিপ তুলে ধরে খসড়া পরিপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন এবং বছরে ১৮ হাজারের বেশি সাঁতার না জানায় ডুবে মারা যায়।

“তাই সরকার এখন থেকে দেশের সকল উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা পাঠ্য বিষয় হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সাঁতার শেখা ও অনুশীলনকে শিক্ষার্থীদের ‘জীবন রক্ষাকারী কৌশল চর্চা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে খসড়া পরিপত্রে।

“সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের পুকুর বা জলাশয় স্বাস্থ্যসম্মত ও সাঁতার উপযোগী করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নিকটবর্তী হাজা-মজা পুকুর বা জলাশয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা পরিষদের সহযোগিতা নেওয়া যাবে।”

খসড়ায় বলা হয়েছে, সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি দেশীয় প্রচলিত সরঞ্জাম ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানো যাবে।

সাঁতার শেখানোর সময় শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক অথবা সাঁতার প্রশিক্ষককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের সাঁতার অনুশীলনের আলাদা সময় নির্ধারণ করতে হবে।

“যেসব স্কুল-কলেজের পুকুর নেই সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুকুর বা জলাশয় ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এনিয়ে সমস্যা হলে ইউএনও সমাধান করবেন।”

মহানগরীর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুকুর বা উপযুক্ত জলাশয় নেই তাদের মহানগরীর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্স বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

সাঁতার শেখানোর বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তিন মাস পর পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে (মহানগরীর ক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) দিতে হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাঁতার প্রশিক্ষণের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা প্রতিমাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কাছে প্রতিবেদন দেবেন। মাউশি তিন মাস পর পর এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।