‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন’

অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি খুনিদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যাপক অজয় রায়কে।

শামীমা বিনতে রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2015, 06:02 PM
Updated : 11 March 2015, 06:09 PM

গণমাধ্যমে প্রায় আড়াল হয়ে থাকা এই ঘটনাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক, যার ছাত্র ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী বিজ্ঞানী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়া।

বুধবার দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক অজয় রায় আরও বলেছেন, ছেলে খুন হওয়ার পর সমবেদনা জানাতে তার বাসায় ছুটে এসেছিলেন চারজন মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও আসাদুজ্জামান নূর।

২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলনের মধ্যে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তার বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

ব্লগে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে রাজীবের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। একই কারণে হুমকি পাচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎও।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বই মেলার বাইরে অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার দুদিন পরই নিজের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আসে বলে জানান অজয় রায়।

তবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কিংবা সরকারের তরফ থেকে বলা হয়নি গণমাধ্যমে। অজয় রায়ও কিছু বলেননি সাংবাদিকদের।তবে সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।   

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় টেলিফোন আসার কথা জানালেও এ নিয়ে নিজে কেন কিছু আগ বাড়িয়ে বলেননি, তার উত্তরও দেন অধ্যাপক অজয় রায়।

“এ বিষয়ে তারা কেন লুকোচুরি করেছেন, জানি না। তাদের দিক থেকে কেন আসেনি, তা তো বলতে পারব না। উনি দেননি, আমি তো আর আগ বাড়িয়ে দিতে পারি না।”

প্রধানমন্ত্রীর ফোন সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হয়ত বলেননি। তার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়, অনেক পুরোনো সম্পর্ক।”

একুশে পদকে ভূষিত অধ্যাপক অজয় রায় জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি তার বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন এসেছিল। তবে তখন তিনি ঘরে ছিলেন না।

“রাতে বাসায় ফিরলাম। তখন আমার বৌ মা (ছোট ছেলে অনুজিত রায়ের স্ত্রী) একটা টেলিফোন নম্বর দিয়ে বলল যে, ‘পিএম টেলিফোন করেছিলেন। তুমি তো ছিলে না, আমাকে একটা নম্বর দিয়ে বলেছে- স্যার যত রাতেই ফিরুক, এই নম্বরে যেন আমাকে যোগাযোগ করে’।”

তারপর টেলিফোন করেছিলেন ছেলেহারা এই শিক্ষক এবং আধা ঘণ্টার মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় তার।

“সমবেদনা প্রকাশ করলেন, আমাকে বললেন- ‘আমি কী করতে পারি আপনার জন্য’। আমি বললাম, তুমি তো আমার ছাত্রীতুল্য, তোমার হাজব্যান্ড আমার সরাসরি ছাত্র। বলল, ‘সেগুলো তো আমি জানি স্যার’।

“আমি বললাম, দেখ তুমি এখন ক্ষমতার শীর্ষে আছ। তোমার আমলে এসব ঘটনা ঘটবে, এটা তো সহ্য করা যায় না। তিনি বললেন, ‘আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট স্যার। আপনার প্রতি তো সহানুভূতি তো আছেই। আপনার এই দুর্ঘটনার জন্য আপনার পাশে আছি আমি। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ডিবি দিয়ে, যাতে অভিজিতের খুনিরা চিহ্নিত হয়’।”

চার মন্ত্রীর বাড়িতে আসার কথা জানিয়ে অজয় রায় বলেন, “মুহিত ভাই, ‍তিনি তো আমার পুরনো মানুষ, ছাত্রজীবনে তিনি আমাদের তিন বছরের সিনিয়র ছিলেন, এসএম হলের ভিপি ছিলেন। তার পরে ইনু এসেছিলেন, রাশেদ খান মেনন এসেছিলেন, আমার ছাত্র, সাংস্কৃতিক কর্মী নূর এসেছিল।”

অভিজিৎকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে অজয় রায় সাংবাদিকদের সামনে এসে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে কথা বলেছিলেন।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা আর আন্তরিকতার ওপর আমার আস্থা আছে। তিনি সর্বোচ্চ নির্দেশ দিতে পারেন।

“কিন্তু খুনিদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের কাজটি গোয়েন্দা ও পুলিশকেই করতে হবে। তারা মাটির নিচ থেকেও অপরাধীদের বের করে আনার সক্ষমতা দেখিয়েছে বিভিন্ন সময়।”

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবার করা মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতা করতে এসেছে এফবিআইও।

অভিজিতের বাবার সন্দেহ, ধর্মীয় উগ্রপন্থিরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশের সন্দেহের তীরও একই দিকে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় পক্ষকাল গড়িয়ে গেলেও এখনও খুনি কাউকে সনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি ‍পুলিশ।

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্রবাদের প্রচারক ফারাবী শফিউর রহমানকে কেবল আটক করেছে র‌্যাব। ফেইসবুকে তিনি অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। 

তদন্ত কাজে সন্তুষ্ট কি না- জানতে চাইলে অজয় রায় বলেন, “আমি সন্তুষ্ট না। একমাত্র ফারাবী নামের এক উন্মাদকে ধরা হয়েছে। আরও ১০/১২ জনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে ডিবি জানাচ্ছে। কিন্তু এই নজরদারির মানে কী, সেটা স্পষ্ট না।”

মুক্তমনা ব্লগসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ এবারের একুশের বইমেলায় তার বই প্রকাশ উপলক্ষে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। ব্লগার বন্যাও স্বামীর মতো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

২৬ ফেব্রুয়ারি হামলার সময় স্বামীর সঙ্গে থাকা বন্যাও আহত হন, একটি আঙুল হারাতে হয়েছে তাকে। আহত অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাকে।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ফয়সাল আতিক)

[ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচিত অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার বাবা অজয় রায়ের একটি সাক্ষাৎকার ভিডিওসহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে আসছে অচিরেই]