শুক্রবার শাঁখারীবাজারের অলিতে গলিতে রঙ ছোড়াছুড়ি আর আবিরে রাঙা তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসে ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র।
দিনের শুরু থেকে রঙের শুভেচ্ছায় সিক্ত হওয়ার এই খেলা চলেছে বিকেল নাগাদ। পুরো এলাকায় চলমান রঙিন মুখের গতি হার মানিয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আতঙ্ককে।
বন্ধুদের সঙ্গে এই উৎসবে অংশীদার হতে এসেছিলেন তানভীর হামিম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র বললেন, উৎসবে কোনো ধর্ম থাকে না, থাকে নানা রঙ।
“এটি তো আমাদের সবার উৎসব, এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস বিষয়টিকে না দেখে বরং সবাই মিলে রঙ মেখে আনন্দ করাটাই মুখ্য ভেবে এসেছি।”
বললেন, চলমান অবরোধের কারণে এমনিতেই আনন্দ করার স্বাধীনতা কমে গেছে তাই সোজা এই তল্লাটে চলে এসেছেন।
প্রথমবারের মতো এই উৎসবে যোগ দিতে ছুটে এসেছিলেন অভিনয়শিল্পী পরিচয় দেওয়া সাইফ খান। জানালেন, এই রঙের উৎসবে সবার সঙ্গে একত্রে বেশ উপভোগ করেছেন। হাতের ক্যামেরা দেখিয়ে জানান, ছবিও তুলেছেন মনের ‘রঙ’ মাখিয়ে।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী একটি বড় অংশের অধিবাসীদের বাস। ঢাকায় হোলি উৎসব মূলত এই এলাকাকে কেন্দ্র করেই।
গত কয়েকবছরে ঢাকেস্বরী মন্দিরেও লেগেছে এর ছোঁয়া। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের চারুকলা বিভাগে এই উৎসব পালন করতে দেখা যায়।
৩৯ নম্বর শাঁখারীবাজার রোডের দোতলার বাসিন্দা শিউলি দত্ত ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে দেখছিলেন নিচের রাস্তার রংয়ের খেলা, নাচ-গান আর নিচে রঙ আর জলের ছোড়াছুড়ি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তার দুই ছেলে তাদের মতো আনন্দ করতে গেছে আর তাই তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আশপাশের বাসার চার জন শিশু।
কারণ হিসেবে বললেন, “সবাইতো মজা করছেন নিজের মতো করে সব ভেদাভেদ ভুলে। এটাই বড় কথা।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৮৯ শতাংশ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী।
শিউলি জানান, ৫ মার্চ শ্রীকৃষ্ণর পূজা করে তার চরণে আবির মেখে শুরু হয় এই উৎসব, যাকে বলা হয় দোলপূর্ণিমা। আর শুক্রবার চলে রঙ খেলা, যা পরিচিত হোলি নামে।
“দোলপূর্ণিমার পূজার দিনসহ সাতদিন ধরে এই পাড়ায় চলে রঙের খেলা। তবে হোলির পর পাঁচদিন যা হয় তা পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।”
শুধু দেশি নয়, এই রঙের উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায় বেশ কিছু বিদেশিকে। এদেরই দুইজন এজে ও স্কাইলার লরেন্স; আমেরিকান পর্যটক।
তারা জানান, এমন উৎসব তারা আগে কখনও দেখেননি।
“এমন দিশেহারা আনন্দের উৎসব শুধু ছবি আর টেলিভিশনে দেখেছি। বাংলাদেশে এসে দেখলাম নিজের চোখে,” বললেন তিনি।
তবে এ উৎসবকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশের চিত্র হিসেবেই দেখছেন শাখাঁরীবাজার শ্রী শ্রী শনিদেবের মন্দির কমিটির সহসভাপতি রঞ্জন বিশ্বাস।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রঙের এই উচ্ছ্বাসই বলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। এই উৎসব সর্বজনীন।”