বিএনপি-জামায়াত জোটের দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধের শেষ দিকে সন্ধ্যার পরেই নগরীতে নাশকতার কয়েকটি ঘটনায় এই আতঙ্ক ভর করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সন্ধ্যার পর নাশকতার ঘটনায় উদ্বেগের কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও।
মহানগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্ধকারে কোনো অলিগলি থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে, যা দিনের বেলায় সম্ভব নয়।
“এছাড়া অন্ধকারে যে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে অলিগলিতে ঢুকে গেলে তাদের ধরা পুলিশের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।”
পরিস্থিতির উত্তরণে নাশকতাকারীদের ধরতে চলমান অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয়দের দিয়ে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন নগর পুলিশের শীর্ষ কর্তা।
গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দেওয়ার পর আগুন-বোমায় প্রাণহানির মধ্যে নাশকতাকারীদের তথ্য দিতে সরকার, পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
এরপরেও গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পাশাপাশি হাতবোমা ছুড়ে নিরীহ মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে, যদিও প্রথম দিকের তুলনায় কমেছে মাত্রা।
অবরোধের মধ্যে বন্দরনগরীতেই সন্ধ্যার পর নাশকতায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
এমন পরিস্থিতিতে দিনের বেলায়ই সব কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন নগরবাসী।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা উন্নয়ন কর্মী সুব্রত ধর মিঠু বলেন, “সন্ধ্যা হতেই মনের ভেতর একটা আতঙ্ক কাজ করে।
“রাস্তায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া হাতবোমা, পেট্রোল বোমায় বা যানবাহনে যেভাবে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে তাতে সবার মধ্যেই সন্ধ্যার পর চলাচল করতে ভয় কাজ করছে।”
গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা ছুড়ে একটি বাসে আগুন দেয়ার পাশাপাশি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। একই সময়ে নগরীর ইপিজেড মোড়ে একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।
১১ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী থানার শাহমির পুর এলাকায় অটোরিকশায় পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হওয়ার পাঁচদিন পর মারা যান ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তি।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হাতবোমা ও পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অনেকে।
এদিকে গত ২০ জানুয়ারি নগরীর কদমতলী এলাকায় বোমা মারতে গিয়ে সেটি নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে আহত হন মো. সাকিব নামে ইসলামী ছাত্র শিবিরের এক কর্মী। সপ্তাহখানেক পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
আতঙ্কের কথা তুলে ধরে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী আফরিনা নাজনীন বলেন, “বাইরে বের হলেই আতঙ্কের মধ্যে থাকি কখন কোন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি কি না।
“সন্ধ্যার পর সে ভয় আরও বেড়ে যায়। নানা কারণে পরিবারের কাউকে না কাউকে সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বের হতে হয়। তারা যতোক্ষণ ফিরে না আসে ততোক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি।”
“নিজেরা মাঠে না থেকে সাত/আটশ টাকার বিনিময়ে কিছু লোকজনকে নাশকতার কাজে ব্যবহার করছেন তারা।”
নাশকতা প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই-মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের সাথে কথা বলছি। পুরস্কার দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছি।
“আগামী সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণকে নিয়ে কমিটি করা হবে, যারা লাঠি হাতে এলাকায় নাশকতা রোধে পাহারায় থাকবে।”