কূটনীতিকের কাছে মিলল ২৭ কেজি সোনা

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে ২৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2015, 04:26 AM
Updated : 9 March 2015, 02:24 PM

বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার কাজী মো. জিয়াউদ্দিন জানান, দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (বাণিজ্য ও অর্থনীতি) সন ইয়াং এর সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে বিমানবন্দর কাস্টমস ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা ওই সোনা পায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কাস্টমস, এপিবিএন ও উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকে পর ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই কূটনীতিককে।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা আসেন সন ইয়াং। কিন্তু তার ব্যাগেজের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক পরিচয়ের ঘোষণা না থাকায় অন্যদের মতো তার ব্যাগও স্ক্রিনিং করতে চান কাস্টমস কর্মকর্তারা।  

এপিবিএন এর সুপার তানজিনা আকতার জানান, সন ইয়াং ব্যাগ স্ক্রিনিংয়ে বাধা দেন এবং নিজের কূটনেতিক পরিচয় দিয়ে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করেন।

এই উত্তর কোরীয় কূটনীতিক এরপর ব্যাগ নিয়ে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এপিবিএন সদস্যরা তার পথ আটকায়।  

“কাস্টমস কর্মকর্তারা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি কূটনীতিক হলেও তার ব্যাগেজের বিষয়ে আগে থেকে ঘোষণা না দেওয়ায় স্ক্রিনিং না করে সেটি ছাড়া যাবে না।”

দীর্ঘ সময় বাক বিতণ্ডার পর তার কাছ থেকে কালো রঙের ট্রলি ব্যাগটি নেওয়া হয় এবং সেটি স্ক্রিনিং করে সোনার সন্ধান পান কাস্টমস কর্মকর্তারা।

তানজিনা আকতার জানান, ব্যাগের ভিতরে ১৭০টি সোনার বার ছিল, যার ওজন ১৯ কেজি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের গয়না মিলিয়ে আরও আট কেজি সোনা পাওয়া যায় সেখানে। 

“ব্যাগের ভেতরে সোনা লুকানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি। ব্যাগে সোনা ছাড়ার আর কিছু ছিল না।”

সব মিলিয়ে এই ২৭ কেজি সোনার বাজারমূল্য আনুমানিক সাড়ে ১৩ কোটি টাকা বলে কাস্টমস কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন জানান।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা রাতেই সন ইয়াংকে নিতে বিমানবন্দরে আসেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন রাষ্ট্রদূত রি সং হিয়ান। রাতভর কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলে।

ব্যাগে সোনা মেলার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও খবর পাঠানো হয়। বিমানবন্দরে এপিবিএন কার্যালয়ে কয়েক দফা আলোচনার পর শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ওই ব্যাগ রেখে মুচলেকা দিয়ে কূটনীতিককে ছাড়িয়ে নিয়ে যান দূতাবাস কর্মকর্তারা।

কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার জিয়াউদ্দিন বলেন, “উত্তর কোরিয়া দূতাবাস লিখিতভাবে সন ইয়াংয়ের সোনা আনার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই ব্যববস্থা নেবে।”

ভিয়েনা কনভেনশন হলো ১৯৬১ সালে ভিয়েনায় স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যাতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৯০টি দেশ এই কনভেনশনে সই করেছে।