গফুরের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এর মধ্যেই তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া মিমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
নিখোঁজের প্রায় দুমাস পর মঙ্গলবার রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান থেকে গফুরের লাশ তোলার পর বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়।
গফুর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পবা থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার জান্নাতুল সালমা মিম নওগাঁয় একটি ক্লিনিক স্থাপনের সময় অর্ধেক শেয়ার দেওয়ার কথা বলে গফুরের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। ওই শেয়ারের পাওনা চাওয়ার জের ধরেই গফুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার ধারণা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মেয়ে মিম গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা বোনারপাড়া গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদকে বিয়ে করেন। কয়েক বছর আগে নওহাটায় সায়াগ্রাম নামে একটি এনজিও তৈরি করে তার অধীনে ক্লিনিক খুলে বসেন নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করা হারুন।
দুবছর আগে ওই ক্লিনিক গুটিয়ে নিয়ে নওগাঁ গিয়ে মিমের মাধ্যমে ‘সালমা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিক খোলেন। মিম ও তার বোন জান্নাতুন নাইম ওই ক্লিনিক দেখা শোনা করতেন।
আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সময় গফুরের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় মিম। তবে টাকার পরিমাণ নিয়ে দুই কথা বলছে মিম- কখনো ৩০ লাখ, কখনো ২০ লাখ।
এঘটনায় চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া মিমের সঙ্গে তার বোন নাঈমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
মিমের দেওয়া তথ্যের বরাদ দিয়ে আজাদ বলেন, “প্রায় দুই মাস আগে মেয়র গফুর ওই ক্লিনিকের হিসাব নিকাশের জন্য নওগাঁয় গেলে মিম ও হারুনের সঙ্গে বাক বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে গফুরকে লাঞ্ছিত করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়।”
এর পর থেকে গফুর তার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মিমকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে গফুরকে ঢাকায় ডাকে মিম।
“ট্রেনে করে ১ জানুয়ারি ভোরে গফুর ঢাকায় পৌঁছলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সকালেই তাকে মোহাম্মদপুর ২ নম্বর রোডের মিমের ভাড়া বাড়িতে নেওয়া হয়। ওই বাড়ির একটি ঘরে বিনা খাবারে দুদিন আটকে রাখে তারা। এক পর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে গফুরকে হত্যা করে মিম ও হারুন।”
এই তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, মিম হারুনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা মানিকগঞ্জ থাকে। সেখানেও ছায়গ্রাম নামে হারুনের একটি এনজিও ও ক্লিনিক রয়েছে। মাঝে মধ্যে হারুন ঢাকায় এসে মিমের বাসায় থাকতো।
“তবে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হারুন ঢাকার মিমের বাসাতেই ছিল। এর পর সে আর ওই বাসায় যায়নি বলে মিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।”
গফুরের ময়নাতদন্তের নথি ‘লাপাত্তা’
এদিকে আজিমপুরে গফুরের লাশ দাফনের আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্ত হলেও ফরেনসিক বিভাগ থেকে এর প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ।
আজাদ বলেন, গফুরকে খুন করার পর ৩ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার মামলা করা হয়। কৌশল করে সেখানে মিম নিজেকে শামীমা খাতুন নামে গফুরের বোন পরিচয় উল্লেখ করে। আর গফুরের বাড়ি উল্লেখ করে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর এলাকা।
মামলার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। পর দিন ৪ জানুয়ারি মর্গ থেকে বোন শামীমা পরিচয়ে লাশ গ্রহন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখে মিম। ৮ জানুয়ারি লাশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, “৩ জানুয়ারির ময়নাতদন্তের রেজিস্ট্রার খাতায় নাম থাকলেও কোন নথিপত্র পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার লাশ তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের নেওয়ার পর জানা যায় গত ৩ জানুয়ারি গফুরের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যেই ময়নাতদন্তের নথিপত্র গায়েব হয়।”
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে মোহাম্মদপুর ২ নং রোডের ৩ নম্বর বাসা থেকে পুলিশ গফুরের পোশাক ও ব্যাগ উদ্ধার করেছে। ওই বাসায় জান্নাতুল সালমা মিম ভাড়া থাকতো, যে আটকের পর নিজেকে মেয়র গফুরের স্ত্রী বলে দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার রাতেই গফুরের মৃতদেহ নওহাটায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ।